0

টাইপ 2 ডায়াবেটিস

Created : Tue Aug 13 2024



মূলকথাঃ

বাংলাদেশে বসবাসরত ৮ জনের মধ্যে ১ জন প্রাপ্তবয়স্ক টাইপ ২ ডায়াবেটিস-এ ভোগে যাদের মধ্যে বেশিরভাগ এ বিষয়ে অজ্ঞ। টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর রোগীদের রক্তে সুগার বা গ্লুকোজের মাত্রা অতিরিক্ত থাকে। শরীরে ‘ইনসুলিন’ নামের হরমোনের সমস্যার কারণে টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগ দেখা দেয়। ইনসুলিন আপনার রক্তে গ্লুকোজ তথা সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এবং শক্তি উৎপাদন করে। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেলে এটা রক্তনালী, স্নায়ুতন্ত্র, চোখ, হৃদপিন্ড, লিভার, এবং কিডনি ড্যামেজ/ ক্ষতিগ্রস্থ করে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস দৃষ্টিশক্তি হারানো, এবং হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত বিভিন্ন মারাত্মক রোগের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে। পরিমিত ডায়েট, নিয়মিত শরীরচর্চা, এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে।


টাইপ ২ ডায়াবেটিস

টাইপ 2 ডায়াবেটিস হল আপনার শরীরে ইনসুলিন নামক একটি হরমোন পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি না হওয়ার কারণে বা এটি যে ইনসুলিন তৈরি করে তা সঠিকভাবে কাজ না করার কারণে উচ্চ রক্তে শর্করার মাত্রা হয়- যা ইনসুলিন প্রতিরোধ হিসাবে পরিচিত। সময়ের সাথে সাথে উচ্চ রক্তে শর্করার মাত্রা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক, সেইসাথে আপনার চোখ, কিডনি এবং পায়ের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এগুলোকে ডায়াবেটিস জটিলতা বলা হয়। তাই চিকিত্সার মধ্যে রয়েছে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং সক্রিয় থাকার জন্য সহায়তা পাওয়া, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা। আপনাকে ইনসুলিন সহ ঔষধ গ্রহণ করতে হবে এবং আপনার রক্তে শর্করা নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। 


টাইপ 2 ডায়াবেটিস বছরের পর বছর ধরে নির্ণয় করা যেতে পারে যদি আপনার লক্ষণ না থাকে বা আপনার লক্ষণগুলি মিস হয়। এটি কেবলমাত্র অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার সাথে বসবাসকারী ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে না, যদিও এটি জাতিগততার সাথে ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে একটি। টাইপ 2 ডায়াবেটিস হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে তবে এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই 25 বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে যাদের পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে। টাইপ 2 ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করার জন্য অনেক লোক কিছু করতে পারে। কোন প্রতিকার নেই কিন্তু টাইপ 2 ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কিছু লোক তাদের ডায়াবেটিস নিরাময় করতে পারে।


টাইপ ২ ডায়াবেটিস লক্ষণ ও উপসর্গ

  • টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের নিম্নোক্ত লক্ষণ দেখা দিতে পারে:
  • অতিরিক্ত তৃষ্ণা অনুভব করা
  • ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন হওয়া
  • অতিরিক্ত ক্ষুধা, ক্লান্তি অনুভব করা
  • ওজন হ্রাস
  • দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া
  • ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া
  • স্পর্শ ও ব্যথার অনুভূতি কমে যাওয়া


টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকির কারণসমূহ:

যেকোনো বয়সেই টাইপ ২ ডায়াবেটিস হতে পারে, তবে মধ্যবয়স্ক এবং বয়স্কদের মধ্যে এর ঝুঁকি বেশি।


ঝুঁকি বাড়ানোর অন্যান্য কারণগুলো:

  • পরিবারের কারো টাইপ ২ ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স থাকলে
  • প্রি-ডায়াবেটিস, অর্থাৎ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কিন্তু ডায়াবেটিসের নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে কম হলে
  • অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি
  • শারীরিক কার্যকলাপের অভাব
  • পূর্বে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে
  • তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার
  • খাদ্যতালিকায় অতিরিক্ত চিনি এবং কম ফাইবারযুক্ত খাবার থাকা
  • অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে


টাইপ ২ ডায়াবেটিস জটিলতা:

টাইপ ২ ডায়াবেটিস দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কিছু সাধারণ জটিলতা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:


  • হৃদরোগ এবং স্ট্রোক: টাইপ ২ ডায়াবেটিস হৃদরোগ, হৃৎপিণ্ডের অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। এটি উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, এবং অ্যান্টিকোয়াগুলেশনের কারণে ঘটে।
  • কিডনি সমস্যা (নেফ্রোপ্যাথি): দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কিডনির ক্ষতি করতে পারে, যা কিডনি বিকল বা ডায়ালাইসিসের প্রয়োজনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
  • দৃষ্টিশক্তির সমস্যা (রেটিনোপ্যাথি): ডায়াবেটিসের কারণে রেটিনায় ক্ষুদ্র রক্তনালীগুলোর ক্ষতি হতে পারে, যা দৃষ্টিশক্তি হারানো বা অন্ধত্বের কারণ হতে পারে।
  • স্নায়ু ক্ষতি (নিউরোপ্যাথি): উচ্চ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে পায়ে ও হাতে ব্যথা, ঝিমঝিম, এবং অসাড়তা হতে পারে। এটি প্রায়ই ডায়াবেটিক ফুট আলসারের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
  • পায়ের সমস্যা: ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ু ক্ষতি এবং রক্ত চলাচলের সমস্যা পায়ে সংক্রমণ বা ক্ষতের ঝুঁকি বাড়ায়, যা মারাত্মক অবস্থায় আম্পুটেশনের প্রয়োজন হতে পারে।
  • ত্বকের সমস্যা: ডায়াবেটিসের কারণে ত্বকে সংক্রমণ, ফোড়া, এবং অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • মস্তিষ্কের সমস্যা: টাইপ ২ ডায়াবেটিসের কারণে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলের সমস্যা হতে পারে, যা স্মৃতিভ্রংশ বা ডিমেনশিয়া ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • হজমের সমস্যা: ডায়াবেটিক গ্যাস্ট্রোপ্যাথির কারণে হজম প্রক্রিয়ায় সমস্যা হতে পারে, যা খাদ্য হজমের সমস্যা, বমি, এবং বদহজমের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
  • হাড় এবং জয়েন্টের সমস্যা: টাইপ ২ ডায়াবেটিসের কারণে অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • মানসিক স্বাস্থ্য: ডায়াবেটিস রোগীরা প্রায়ই মানসিক চাপ, উদ্বেগ, এবং হতাশার মধ্যে ভুগতে পারেন।


ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত চিকিৎসা পরীক্ষা, এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন এই জটিলতাগুলোর ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করতে পারে।


টাইপ ২ ডায়াবেটিস ফুড চার্ট

ডায়াবেটিসে খাদ্যের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য। খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টির সঠিক মিশ্রণ রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হতে পারে।


এখানে টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি উন্নত এবং ব্যক্তিগতকৃত খাদ্য পরিকল্পনা আলোচনা করা হলো।


খাদ্য পরিকল্পনা: ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য তালিকা নির্ধারণ করা হয় ব্যক্তির বয়স, ওজন, লিঙ্গ, দৈনন্দিন কার্যক্রম, এবং স্বাস্থ্যগত চাহিদার ভিত্তিতে। সঠিক সময়ে এবং সঠিক পরিমাণে খাবার গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি, যা রক্তের শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।


খাদ্য তালিকা উদাহরণ:

  • সকাল ৬:০০: ১ চা চামচ মেথি গুঁড়া পানির সাথে খাওয়া।
  • সকাল ৭:০০: চিনি ছাড়া এক কাপ চা, ১-২টি হালকা বিস্কুট।
  • সকাল ৮:৩০: ১ প্লেট ওটমিল বা উপ্পমা, আধা বাটি মিক্সড শস্য, ১০০ মি.লি. ফ্যাট-মুক্ত দুধ (চিনি ছাড়া)।
  • সকাল ১০:৩০: ১টি ছোট ফল বা ১ কাপ পাতলা বাটারমিল্ক বা লেবুর জল (চিনি ছাড়া)।
  • মধ্যাহ্নভোজ: ২টি মিশ্রিত আটার রুটি, ১ বাটি ভাত, ১ বাটি ডাল, ১ বাটি দই, অর্ধ কাপ সয়াবিন বা পনির সবজি, অর্ধ বাটি সবুজ সবজি, এক প্লেট সালাদ।
  • বিকেল ৪:০০: চিনি ছাড়া ১ কাপ চা, ১-২টি বিস্কুট বা টোস্ট।
  • সন্ধ্যা ৬:০০: ১ কাপ স্যুপ (সবজি বা চিকেন)।
  • রাত ৮:৩০: ২টি আটার রুটি, ১ বাটি ডাল, আধা বাটি সবুজ সবজি, ১ প্লেট সালাদ।
  • রাত ১০:৩০: চিনি ছাড়া ১ কাপ ক্রিম-মুক্ত দুধ।


এড়িয়ে চলার খাবারসমূহ:


  • লবণ: অত্যধিক লবণ রক্তচাপ বৃদ্ধি করে এবং ডায়াবেটিসে মারাত্মক হতে পারে। প্রাকৃতিক উৎস যেমন ফল ও শাকসবজি থেকে প্রাপ্ত লবণই যথেষ্ট।
  • চিনি ও মিষ্টিজাতীয় পদার্থ: প্রক্রিয়াজাত চিনি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করে, তাই মধু বা গুড়ের মতো প্রাকৃতিক মিষ্টি বিকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে, তবে খুব অল্প পরিমাণে।
  • চর্বিযুক্ত খাবার: অত্যধিক চর্বিযুক্ত খাবার, বিশেষত ভাজাপোড়া, শরীরে অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট জমা করে। তবে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ তেল গ্রহণ করতে হবে যাতে ভিটামিন ই এর মতো চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিনগুলি সঠিকভাবে শোষিত হয়।
  • লাল মাংস: লাল মাংসের পরিবর্তে সপ্তাহে ২-৩ বার মুরগি বা মাছ খাওয়া ভালো। মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড হার্টের জন্য উপকারী।
  • ময়দা: ময়দার পরিবর্তে সম্পূর্ণ শস্যের আটা ব্যবহার করুন। এটি শরীরে ধীরে ধীরে গ্লুকোজ রিলিজ করে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।


গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:

  • প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট দ্রুত হাঁটুন।
  • প্রধান খাবারের মধ্যে হালকা খাবার খান যেমন স্যালাড বা ফল।
  • খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বেশি খান।
  • রক্তে গ্লুকোজ স্তর বজায় রাখতে দিনে ৬টি ছোট খাবার গ্রহণ করুন।


প্রয়োজনীয় ক্যালোরি:

  • মধ্যবয়সী বা বয়স্ক ডায়াবেটিস রোগী: ১০০০ - ১৮০০ ক্যালোরি।
  • তরুণ ডায়াবেটিস রোগী: ১৮০০ - ৩০০০ ক্যালোরি।


পুষ্টির চাহিদা:

  • প্রতিদিনের কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ: ১৮০-২৫০ গ্রাম।
  • প্রতিদিনের প্রোটিন গ্রহণ: ৬০-১০০ গ্রাম।
  • প্রতিদিনের ফ্যাট গ্রহণ: ৫০-৭০ গ্রাম।


টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর জীবনধারা

টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের জীবনধারা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে, যা রোগীর স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে এবং রোগের জটিলতা কমাতে সাহায্য করে। এখানে একটি সুস্থ জীবনধারার জন্য কিছু মূল পরামর্শ দেওয়া হলো:


১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:

  • ফাইবারযুক্ত খাবার: প্রতিদিন প্রচুর ফাইবারযুক্ত খাবার খান, যেমন সবজি, ফল, পুরো শস্য ও বাদাম। ফাইবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করে এবং হজমে সহায়ক।
  • স্বাস্থ্যকর চর্বি: অল্প পরিমাণে স্বাস্থ্যকর চর্বি গ্রহণ করুন যেমন অ্যাভোকাডো, অলিভ অয়েল, এবং বাদাম। পরিশোধিত চর্বি এবং ভাজা খাবার কমিয়ে দিন।
  • কোমল খাদ্য নির্বাচন: উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত খাবার যেমন সাদা চাল, আলু, এবং পাউরুটি পরিহার করুন। এগুলোর পরিবর্তে পুরো শস্যের খাবার ব্যবহার করুন।
  • মিষ্টির সীমাবদ্ধতা: চিনি এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার কমিয়ে দিন। প্রাকৃতিক মিষ্টি যেমন মধু বা গুড় অল্প পরিমাণে ব্যবহার করা যেতে পারে।


২. নিয়মিত ব্যায়াম:

  • দৈনিক শারীরিক কার্যক্রম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট মাঝারি থেকে তীব্র ব্যায়াম করুন, যেমন হাঁটা, সাইকেল চালানো, বা সাঁতার কাটা। ব্যায়াম ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করে এবং রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • শক্তি প্রশিক্ষণ: সপ্তাহে ২-৩ দিন শক্তি প্রশিক্ষণ (যেমন ওজন উত্তোলন) করুন। এটি পেশীর পরিমাণ বাড়ায় এবং মেটাবলিজম উন্নত করে।


৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ:

  • স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা: অতিরিক্ত ওজন টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন।


৪. মানসিক স্বাস্থ্য:

  • স্ট্রেস ব্যবস্থাপনা: মানসিক চাপ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। ধ্যান, যোগব্যায়াম, এবং শখের মাধ্যমে স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করুন।
  • পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা মানসম্পন্ন ঘুম নিশ্চিত করুন। ঘুমের অভাব ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কমিয়ে দিতে পারে।


৫. নিয়মিত মেডিক্যাল চেকআপ:

  • রক্তে গ্লুকোজ পর্যবেক্ষণ: নিয়মিতভাবে রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করুন।
  • সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা: ডায়াবেটিসের কারণে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতার ঝুঁকি বাড়তে পারে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা যেমন চোখের পরীক্ষা, কিডনি ফাংশন পরীক্ষা এবং পাদচিকিৎসা করুন।


৬. স্মার্ট স্ন্যাকিং: স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস:

  • খাবারের মাঝে ক্ষুধা লাগলে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস যেমন তাজা ফল, বাদাম, বা গ্রিক দই খান। প্রক্রিয়াজাত এবং চিনি যুক্ত স্ন্যাকস এড়িয়ে চলুন।


৭. ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার:

  • ধূমপান: ধূমপান রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ধূমপান ত্যাগ করুন।
  • অ্যালকোহল: অ্যালকোহল অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করবেন না। অ্যালকোহল রক্তে গ্লুকোজের মাত্রায় পরিবর্তন ঘটাতে পারে।


৮. অভ্যাস পরিবর্তন:

  • স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গঠন: দৈনন্দিন জীবনে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গঠন করুন এবং তা দীর্ঘমেয়াদীভাবে অনুসরণ করুন।


টাইপ ২ ডায়াবেটিসের জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের উন্নতি সম্ভব। এ ধরনের পরিবর্তনগুলি একজন ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনযাত্রার অংশ হওয়া উচিত, এবং এটি প্রায়ই একটি স্বাস্থ্যকর এবং সুখী জীবনের মূল চাবিকাঠি।


জেনেটিক্স:

টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি জেনেটিক উপাদানের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। যদি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকে, তবে একজন ব্যক্তির এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। বিভিন্ন জেনেটিক বৈশিষ্ট্য এবং মিউটেশনগুলি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং গ্লুকোজের মেটাবলিজমের সঙ্গে সম্পর্কিত, যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।


এপিজেনেটিক্স:

এপিজেনেটিক্স হলো এমন একটি গবেষণার ক্ষেত্র যা জেনেটিক তথ্যের বাইরে পরিবেশগত এবং জীবনধারার প্রভাবগুলি কিভাবে জেনেটিক্সকে পরিবর্তন করে তা পরীক্ষা করে। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে, খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক কার্যক্রম, এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলি এপিজেনেটিক পরিবর্তন ঘটাতে পারে যা রোগের উন্নয়নে প্রভাব ফেলতে পারে।


চিকিৎসা অবস্থা:

টাইপ ২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসার মধ্যে সাধারণত জীবনধারা পরিবর্তন, ঔষধ এবং কখনও কখনও ইনসুলিন থেরাপি অন্তর্ভুক্ত থাকে। রোগীর পরিস্থিতি এবং রোগের তীব্রতার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা পরিকল্পনা করা হয়।


প্যাথোফিজিওলজি:

টাইপ ২ ডায়াবেটিসের প্যাথোফিজিওলজি হলো ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং ইনসুলিনের অভাবের কারণে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাওয়া। এতে প্যানক্রিয়াসের β-সেলগুলি পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন উৎপাদন করতে সক্ষম হয় না অথবা সেলের ইনসুলিন প্রতি প্রতিক্রিয়া কমে যায়।


রোগ নির্ণয়:

টাইপ ২ ডায়াবেটিসের নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়, যেমন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা, হেমোগ্লোবিন এ1সি (HbA1c) পরীক্ষা, এবং গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট। এ পরীক্ষা গুলি রোগ নির্ধারণে সহায়ক এবং গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের পর্যায় নির্দেশ করে।


স্ক্রীনিং:

স্ক্রীনিং হলো রোগের প্রাথমিক চিহ্ন খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের স্ক্রীনিং সাধারণত উচ্চ ঝুঁকির লোকেদের জন্য করা হয়, যেমন পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস রয়েছে, অতিরিক্ত ওজন রয়েছে বা শরীরিকভাবে অক্রিয়।


প্রতিরোধ:

টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধের জন্য জীবনধারার পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত থাকে। স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতনতা এবং নিয়মিত স্ক্রীনিংও প্রতিরোধের অংশ।


ব্যবস্থাপনা:

টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ব্যবস্থাপনা জীবনধারা পরিবর্তন, খাদ্য পরিকল্পনা, এবং ঔষধ ব্যবহারের মাধ্যমে করা হয়। রোগীর অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসার পরিবর্তন এবং পর্যবেক্ষণ করা হয়।


ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ:

রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য, ব্যায়াম এবং ঔষধের সহায়তায় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা মনিটর করতে হয়। নিয়মিত গ্লুকোজ পরীক্ষা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করা প্রয়োজন।


রক্তচাপ কমানো:

টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ একটি সাধারণ সমস্যা। নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, এবং প্রয়োজনে ঔষধ ব্যবহার করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ রক্তচাপ কিডনি সমস্যা, হৃদরোগ, এবং অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।



Visit Our Unani Medicine Shop: Unani Shop | Diabetes Medicine | Unani Skin Care | Unani Fitess | Weight Gainer Supplement | Unani Vitamins & Supplements

NEWSLETTER

GET LATEST NEWS

© 2024 all rights reserved by Renix unani laboratories limited

PaypalVisaAmerican ExpressMastercard