ডায়াবেটিস কি ও কেন হয়? প্রাকৃতিক ভাবে প্রতিরোধের উপায় জানুন

Created : Sun Aug 11 2024

ডায়াবেটিস মেলিটাস, যা সাধারণত ডায়াবেটিস নামে পরিচিত, একটি বিপাকীয় রোগ যা রক্তে গ্লুকোজ বা চিনির মাত্রা অতিরিক্ত বৃদ্ধি করে। গ্লুকোজ শরীরের কোষে শক্তির সরবরাহের জন্য অপরিহার্য এবং ইনসুলিন হরমোন এটি কোষের মধ্যে স্থানান্তরিত করে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে। তবে ডায়াবেটিসের কারণে, শরীর যথেষ্ট ইনসুলিন উৎপন্ন করতে পারে না অথবা এটি কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে না, যার ফলে রক্তে চিনির মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায়। এই অতিরিক্ত গ্লুকোজের মাত্রা স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং স্নায়ু, চোখ, কিডনি এবং অন্যান্য অঙ্গগুলির গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানোর জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম এবং নিয়মিত চিকিৎসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


বিশ্বজুড়ে ৮০ কোটির বেশি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যা আগের হিসাবের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৩০ বছর বয়সী রোগীদের অর্ধেকের বেশি চিকিৎসা নিচ্ছেন না। এই গবেষণা প্রতিবেদনটি ল্যানসেট সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে এবং এটি ডায়াবেটিসের বর্তমান পরিস্থিতি এবং সারা বিশ্বের স্বাস্থ্যখাতে এর প্রভাব সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে।


২০২২ সালে, বিশ্বজুড়ে ১৮ বছর অথবা তার বেশি বয়সী ৮২ কোটি ৮০ লাখ ডায়াবেটিক রোগী শনাক্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে টাইপ-১ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী বিপাকীয় রোগ যা রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের জন্য শরীরের ইনসুলিন ব্যবহারে সমস্যা সৃষ্টি করে। এই রোগের কারণে হৃৎপিণ্ড, রক্তনালী, স্নায়ু, কিডনি এবং অন্যান্য অঙ্গগুলোর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।


dyeman


গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ১৯৯০ সাল থেকে বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৪ শতাংশ হয়েছে, এবং এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। তবে, এই অঞ্চলগুলোতে চিকিৎসা নেওয়ার হার তেমন বাড়েনি। এর বিপরীতে কিছু উচ্চ আয়ের দেশে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে উন্নতি দেখা গেছে।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং এনসিডি রিস্ক ফ্যাক্টর কোলাবোরেশন যৌথভাবে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছে। এটি প্রথম বৈশ্বিক বিশ্লেষণ যা বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিসের আক্রান্তের হার এবং চিকিৎসার তথ্য অন্তর্ভুক্ত করেছে। এক হাজারেরও বেশি গবেষণার ওপর ভিত্তি করে এই বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যেখানে ১৪ কোটির বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন।


ডায়াবেটিস সাধারণত হাই ফাস্টিং প্লাজমা গ্লুকোজ এবং হাই গ্লাইকেটেড হিমোগ্লোবিন পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়। এই পরীক্ষাগুলি ডায়াবেটিস রোগী নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং রোগীকে সঠিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে। তবে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে, যেখানে শুধুমাত্র ফাস্টিং প্লাজমা গ্লুকোজ ব্যবহার করা হয়, সেখানে অনেক সময় ডায়াবেটিস নির্ণয় সঠিকভাবে হয় না। তাই গবেষকরা মনে করেন যে এই দুটি পরীক্ষাই রোগ শনাক্তে জরুরি।

গবেষণায় আরও ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে টাইপ-২ ডায়াবেটিস সাধারণত স্থূলতা এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের সাথে সম্পর্কিত, এবং এটি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অধিক পরিমাণে দেখা যায়। এর ফলে, ওজন নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর খাবার এবং নিয়মিত ব্যায়াম ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।


ডায়াবেটিস কি?

ডায়াবেটিস (Diabetes Mellitus) একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং গুরুতর বিপাকীয় রোগ, যেখানে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা তৈরি হওয়া ইনসুলিন কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে সক্ষম হয় না। এর ফলে রক্তে গ্লুকোজের (শর্করা) মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায়। ইনসুলিন শরীরের কোষগুলোতে গ্লুকোজ প্রবাহিত করতে সাহায্য করে, যা শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। ডায়াবেটিসের কারণে শরীরে গ্লুকোজের ব্যবহার ব্যাহত হয়, যা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতার কারণ হতে পারে।

ডায়াবেটিসের প্রকার

১। টাইপ-১ ডায়াবেটিস: এই ধরনের ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, এবং এটি সাধারণত শৈশব বা কিশোরাবস্থায় শুরু হয়।
২। টাইপ-২ ডায়াবেটিস: এই ধরনের ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিন তৈরি করলেও, তা কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না। এটি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সাধারণত দেখা যায় এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, অতিরিক্ত ওজন ও শারীরিক অক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত।

ডায়াবেটিসের লক্ষণ

ডায়াবেটিসের প্রধান লক্ষণগুলি হলো:

  • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
  • অতিরিক্ত তৃষ্ণা
  • অতিরিক্ত ক্ষুধা
  • অদৃশ্য শক্তির অভাব
  • ক্ষত সেরে উঠতে সময় নেওয়া
  • দৃষ্টি সমস্যার সৃষ্টি


ডায়াবেটিস কেন হয়?

ডায়াবেটিস একটি বহুমুখী রোগ যা বিভিন্ন কারণের মাধ্যমে সৃষ্টি হতে পারে। এর মূল কারণগুলো হলো:


  • খাদ্যাভ্যাস ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: অতিরিক্ত চিনি, তেল, ফাস্ট ফুড এবং কম পুষ্টিকর খাবারের গ্রহণ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। এছাড়া শারীরিক কার্যকলাপের অভাবও এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • জেনেটিক বা পারিবারিক ইতিহাস: যদি আপনার পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকে, তবে আপনি এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকতে পারেন। এটি একটি জেনেটিক ফ্যাক্টর যা আপনার শরীরের ইনসুলিন ব্যবহারের সক্ষমতা প্রভাবিত করতে পারে।
  • অতিরিক্ত ওজন, স্থূলতা এবং শরীরচর্চার অভাব: অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতা ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে, যার ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। এছাড়া শারীরিক কার্যকলাপের অভাবও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • বয়স এবং প্রাকৃতিক পরিবর্তন: বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের ইনসুলিন ব্যবহারের সক্ষমতা কমে যেতে পারে, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। প্রাকৃতিক শারীরিক পরিবর্তনও এ প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখতে পারে।
  • মানসিক চাপ ও অন্যান্য কারণ: দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং অস্থিরতা শরীরের হরমোনাল ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে, যা ডায়াবেটিসের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়াও, কিছু ভিটামিন এবং মিনারেল-এর অভাবও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।


ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায়

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে প্রাকৃতিক উপায় অনুসরণ করা অত্যন্ত কার্যকর। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক সক্রিয়তা এবং মানসিক সুস্থতা বজায় রাখার মাধ্যমে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।


১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করুন

  • পরিশোধিত চিনি ও উচ্চ কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার পরিহার করুন।
  • শাকসবজি, গোটা শস্য, বাদাম ও উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার খান, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • ভিটামিন সি, ডি, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্রোমিয়াম সমৃদ্ধ খাবার ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়।
  • দারুচিনি, কালোজিরা, মেথি, আমলকি ও নিমপাতার মতো হার্বাল উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।


২. নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক সক্রিয়তা বজায় রাখুন

  • প্রতিদিন ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটা, জগিং, সাইক্লিং বা যোগব্যায়াম করুন।
  • শরীরচর্চা ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।


৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ ও হার্বাল উপাদান গ্রহণ করুন

  • অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ, তাই সুস্থ ওজন বজায় রাখা জরুরি।
  • মেথি, কালোজিরা, তুলসী পাতা এবং নিমপাতার মতো হার্বাল উপাদান গ্রহণ করলে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।


৪. মানসিক চাপ কমানোর কৌশল ব্যবহার করুন

  • ধ্যান, যোগব্যায়াম এবং গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমান।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও রিলাক্সেশনের মাধ্যমে কর্টিসল হরমোন নিয়ন্ত্রণে রেখে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ান।


৫. পর্যাপ্ত পানি পান ও ঘুমের গুরুত্ব

  • প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন, যা শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন দূর করতে সহায়তা করে।
  • প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন, কারণ পর্যাপ্ত ঘুম ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে প্রাকৃতিক ঔষধ

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে প্রাকৃতিক ও ইউনানী ঔষধ অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। কিছু ভেষজ উপাদান ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।


১. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্যকারী কিছু প্রাকৃতিক উপাদান

  • আঙ্গুরে রেসভেরাট্রল নামে একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।
  • দারুচিনি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়।
  • প্রতিদিন ১/২ চা চামচ দারুচিনি গুঁড়া পানিতে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  • মেথিতে থাকা গ্যালাক্টোম্যানান নামক ফাইবার হজম ধীর করে এবং গ্লুকোজ শোষণের হার কমায়।
  • প্রতিদিন ১-২ চা চামচ মেথি ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
  • নিমপাতা রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং ব্লাড সুগার কমায়।
  • প্রতিদিন খালি পেটে ২-৩টি নিমপাতা চিবিয়ে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।


২. ইউনানী বা প্রাকৃতিক ঔষধের ভূমিকা

  • ইউনানী ঔষধ প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদানে তৈরি, তাই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম।
  • দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
  • জামুনের বিচির গুঁড়া – রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
  • গুরমার (Gymnema Sylvestre) – ইনসুলিন উৎপাদন বাড়ায় এবং মিষ্টির প্রতি আসক্তি কমায়।
  • কালোজিরা ও মধু – অগ্ন্যাশয়কে সক্রিয় করে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়।
  • আমলকি ও হরিতকি – শরীরের মেটাবলিজম উন্নত করে এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে।


Visit Our Unani Medicine Shop: Unani Shop | Diabetes Medicine | Unani Skin Care & Hair Care | Health & Wellness | Weight Gainer Supplement | Sexual Wellness