Created : Tue Dec 03 2024
ডায়াবেটিস একটি জীবনের বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে, তবে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। জীবনধারা এবং খাদ্যাভ্যাসে কিছু ছোট পরিবর্তন এনে আপনি সহজেই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন এবং সুস্থ থাকতে পারবেন।
খাবারে সুষমতা বজায় রাখা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার প্রতিদিনের খাবারে পর্যাপ্ত শাকসবজি, লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) খাবার যেমন বাদামি চাল, ওটস, ডাল এবং সবজি থাকা উচিত। এ ধরনের খাবার ধীরে ধীরে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।
সাদা চাল, ময়দার রুটি, এবং মিষ্টি জাতীয় খাবারগুলি বেশি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এই খাবারগুলি দ্রুত রক্তে শর্করা বাড়ায়। পরিবর্তে, লো-গ্লাইসেমিক ফুড যেমন ব্রাউন রাইস, কুইনোয়া, এবং শাকসবজি খাওয়া উচিত।
ফাইবার রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। শাকসবজি, ফলমূল (অল্প পরিমাণে), এবং ডাল খাওয়ার মাধ্যমে আপনার ফাইবারের চাহিদা পূর্ণ হবে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবারগুলি শরীরের শর্করার শোষণ ধীরে ধীরে করতে সাহায্য করে।
প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪০ মিনিট হাঁটা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী। হাঁটলে রক্তে শর্করা কমে এবং ইনসুলিনের প্রতিক্রিয়া বাড়ে। হাঁটা একটি সহজ, সাশ্রয়ী, এবং কার্যকর ব্যায়াম, যা খুব কম পরিশ্রমে করা যায়।
সাইক্লিং, সাঁতার কাটা, যোগব্যায়াম বা হালকা কার্ডিও এক্সারসাইজ আপনাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। ব্যায়াম শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৩০ মিনিটের প্রতিদিনের ব্যায়াম রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ১৮% পর্যন্ত কমাতে পারে।
শরীরের অতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত ভুঁড়ি এবং শরীরের চর্বি ইনসুলিন প্রতিরোধকে বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। স্বাস্থ্যকর খাবার এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে গেলে, সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম অপরিহার্য।
পানি শরীরের মেটাবলিজম ঠিক রাখে এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এছাড়াও, মিষ্টি পানীয় এবং সফট ড্রিঙ্কস এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলি শরীরে অতিরিক্ত চিনির মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনাকে আপনার শর্করার বর্তমান স্তরের ধারণা দেয় এবং আপনার খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনধারার প্রভাব বুঝতে সাহায্য করে। যদি কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়, দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এটি ডায়াবেটিসের জটিলতা এড়াতে সহায়ক হতে পারে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে, আপনার চিকিৎসকের সাথে নিয়মিত পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের নির্দেশনা মেনে চলুন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ করুন। ডায়াবেটিসের জন্য যে কোনো নতুন চিকিৎসা বা ওষুধের পরিবর্তন আপনি শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শে করবেন। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হবে।
মানসিক চাপ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা। স্ট্রেস রক্তে শর্করা বাড়িয়ে দেয়, তাই স্ট্রেস কমানোর জন্য মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা আপনার প্রিয় কাজ করুন।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, দৈনিক ১০-১৫ মিনিটের ধ্যান রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। তাই প্রতিদিন একটু সময় নির্ধারণ করে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা ধ্যান করার চেষ্টা করুন।
ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ের যত্ন বিশেষভাবে নিতে হয়। রক্তে শর্করার উচ্চমাত্রা পায়ের শিরাগুলিতে ক্ষতি করতে পারে। প্রতিদিন পা ভালোভাবে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন এবং কোনো ক্ষত বা ফোসকা হলে তা দ্রুত চিকিৎসা নিন।
ধূমপান এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান ডায়াবেটিসের পাশাপাশি অন্যান্য শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ধূমপান ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমাতে পারে এবং অ্যালকোহল রক্তে শর্করার স্তর বৃদ্ধি করতে পারে। তাই এগুলি এড়িয়ে চলা উচিত।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং সুস্থ জীবনযাপন করতে উপরের টিপসগুলো অনুসরণ করুন। খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত পানি পান এবং মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হবে। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন এবং আপনার ব্লাড সুগার পরীক্ষা করুন।
আপনি যদি এই টিপসগুলো অনুসরণ করেন, তবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং সুস্থ জীবনযাপন সম্ভব হবে।
Rupayan FPAB Tower, 7th Floor (E-7), 2 Naya Paltan, Culvert Road, Dhaka-1000
+8801618883013
renixcare@gmail.com