গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হল এমন একটি অবস্থা যেখানে গর্ভাবস্থায় আগে থেকে ডায়াবেটিস না থাকা মহিলাদের রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হয়ে যায়। এটি সাধারণত গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় বা তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ঘটে এবং হরমোনজনিত কারণে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যাওয়ায় শরীর ঠিকমতো গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
যদি চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে এটি মা ও শিশুর জন্য বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে, যেমন ভ্রূণের অতিরিক্ত ওজন (ম্যাক্রোসোমিয়া), প্রি-এক্লাম্পসিয়া, সিজারিয়ান ডেলিভারির প্রয়োজন, শিশুর জন্মের পর রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) ইত্যাদি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, শিশুর জন্মের পর গর্ভকালীন ডায়াবেটিস সেরে যায়, তবে ভবিষ্যতে মা এবং শিশুর টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের কারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাক্টর
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বিভিন্ন কারণ ও ঝুঁকির কারণে হতে পারে। সাধারণত, গর্ভাবস্থায় শরীরে কিছু হরমোনের পরিবর্তন ঘটে, যা ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে গেলে শরীরের রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যা হয় এবং গর্ভকালীন ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে।
প্রধান কারণসমূহ:
- গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা থেকে উৎপন্ন হরমোন (যেমন, এইচপিএল ও প্রোজেস্টেরন) ইনসুলিন প্রতিরোধ বাড়ায়।
- গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে অতিরিক্ত ওজন থাকলে ইনসুলিন কার্যকারিতা হ্রাস পায়।
- জেনেটিক বা পারিবারিক ইতিহাস থাকলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।
ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাক্টর:
- পূর্ববর্তী গর্ভাবস্থায় গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ইতিহাস।
- উচ্চ রক্তচাপ বা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) থাকা।
- গর্ভাবস্থার শুরুতেই বেশি ওজন থাকা বা দ্রুত ওজন বৃদ্ধি।
- ২৫ বছরের বেশি বয়সে গর্ভধারণ।
- পূর্বে ওজন বেশি শিশুর জন্ম দেওয়ার ইতিহাস।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রম এবং কখনো কখনো ওষুধ গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসা পদ্ধতি:
খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ:
- কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার খাওয়া (যেমন, ব্রাউন রাইস, শাকসবজি, ওটস)।
- চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা।
- প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি গ্রহণ করা।
শারীরিক পরিশ্রম:
- গর্ভবতী নারীদের জন্য হালকা ব্যায়াম, হাঁটাচলা এবং যোগব্যায়াম করা উপকারী।
- নিয়মিত ব্যায়াম ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
রক্তে শর্করার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ:
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
- ২ ঘন্টা পরপর খাবারের পর রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করা দরকার।
প্রয়োজনে ইনসুলিন বা ওষুধ:
- যদি খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইনসুলিন বা অন্যান্য ওষুধ গ্রহণ করতে হতে পারে।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা:
- গর্ভধারণের আগে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা।
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং ব্যালান্সড ডায়েট মেনে চলা।
- পারিবারিক ইতিহাস থাকলে গর্ভাবস্থার শুরুতেই শর্করা পরীক্ষা করানো।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকির প্রধান কারণ
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (GDM) হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায় এমন কিছু প্রধান ঝুঁকির কারণ রয়েছে। গবেষণার ভিত্তিতে এসব কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে, যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
- হরমোনজনিত সমস্যা: পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS) থাকলে GDM হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
- ডায়াবেটিসের পূর্ব ইতিহাস: গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা প্রিডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে সম্ভাবনা বেশি।
- পারিবারিক ইতিহাস: প্রথম-স্তরের আত্মীয়দের (মা, বাবা, ভাই-বোন) টাইপ ২ ডায়াবেটিস থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।
- বয়সের প্রভাব: ৩৫ বছর বা তার বেশি বয়সী মহিলাদের GDM ঝুঁকি বেশি থাকে।
- পিতার বয়স: ৫৫ বছরের বেশি বয়সী বাবার সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর GDM হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
- জাতিগত ঝুঁকি: আফ্রিকান-আমেরিকান, দক্ষিণ এশীয়, হিস্পানিক, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের মানুষের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি।
- ওজন সম্পর্কিত ঝুঁকি: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা GDM হওয়ার সম্ভাবনা ২-৮ গুণ বাড়িয়ে দেয়।
- পূর্ববর্তী গর্ভাবস্থা: অতীতের গর্ভাবস্থায় উচ্চ ওজনের শিশু জন্ম দিলে ঝুঁকি বেশি হয়।
- দুর্বল প্রসূতি ইতিহাস: পূর্ববর্তী গর্ভধারণে জটিলতা থাকলে GDM হতে পারে।
- জিনগত কারণ: কিছু নির্দিষ্ট জিনের পরিবর্তন (যেমন: TCF7L2, MTNR1B) গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের সাথে সম্পর্কিত।
- ধূমপান: ধূমপায়ীদের মধ্যে GDM হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ বেশি।
- উচ্চতা: কম উচ্চতার মহিলাদের ক্ষেত্রেও কিছু গবেষণায় ঝুঁকি থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস এর লক্ষণ
- অত্যধিক তৃষ্ণা (Excessive Thirst): বারবার পানি পান করার প্রবণতা বেড়ে যায়।
- বারবার প্রস্রাব হওয়া (Frequent Urination): শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ জমে থাকলে তা প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা (Increased Hunger): শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন ব্যবহার করতে না পারলে অতিরিক্ত ক্ষুধা অনুভূত হয়।
- দুর্বলতা ও ক্লান্তি (Fatigue & Weakness): ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ না করলে শরীর পর্যাপ্ত শক্তি উৎপাদন করতে পারে না, ফলে ক্লান্তি অনুভূত হয়।
- ঝাপসা দেখা (Blurred Vision): রক্তে অতিরিক্ত শর্করা চোখের লেন্সে প্রভাব ফেলে, যা ঝাপসা দৃষ্টির কারণ হতে পারে।
- ওজন দ্রুত বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া (Unusual Weight Gain or Loss) : রক্তে শর্করার মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত হলে ওজনের তারতম্য দেখা দিতে পারে।
- সংক্রমণ বেশি হওয়া (Frequent Infections): মূত্রনালী সংক্রমণ (UTI), ত্বকের সংক্রমণ এবং খামির সংক্রমণ (Yeast Infection) বেশি হতে পারে।
- পায়ে ব্যথা বা অসাড়তা (Tingling or Numbness in Feet & Hands): রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে, যার ফলে এই সমস্যা দেখা দেয়।
Visit Our Unani Medicine Shop: Unani Shop | Diabetes Medicine | Unani Skin Care & Hair Care | Health & Wellness | Weight Gainer Supplement | Sexual Wellness