টাইপ ১ ডায়াবেটিস এর কারণ, লক্ষণ এবং জীবনযাপনের কৌশল

Created : Tue Aug 13 2024

টাইপ ১ ডায়াবেটিস কী

টাইপ ১ ডায়াবেটিস (T1D) একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন-উৎপাদনকারী বিটা কোষ ধ্বংস করে। এতে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়, যা চিকিৎসা না করলে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। T1D সাধারণত শিশু ও তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়, তবে যেকোনো বয়সে হতে পারে। এই রোগের প্রধান কারণ জিনগত এবং পরিবেশগত উপাদানের সংমিশ্রণ হতে পারে।


টাইপ ১ ডায়াবেটিসের চিকিৎসা মূলত ইনসুলিন থেরাপি দিয়ে করা হয়। এতে ইনসুলিন ইনজেকশন বা ইনসুলিন পাম্পের মাধ্যমে শরীরে ইনসুলিন সরবরাহ করা হয়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আধুনিক প্রযুক্তি যেমন ক্রমাগত গ্লুকোজ পর্যবেক্ষণ (CGM) ডিভাইসও ব্যবহৃত হয়। কিছু ক্ষেত্রে, অগ্ন্যাশয় প্রতিস্থাপন এবং ইমিউনোথেরাপি পদ্ধতিও ব্যবহৃত হচ্ছে।


প্রতিরোধের কোনো পরিচিত উপায় না থাকলেও, সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন রোগের জটিলতা কমাতে সাহায্য করতে পারে। যদি চিকিৎসা না করা হয়, তবে ডায়াবেটিস কিটোএসিডোসিস, হৃদরোগ, কিডনি ব্যর্থতা, এবং চোখের ক্ষতি হতে পারে। আরও পড়ুন: ডায়াবেটিস কি ও কেন হয়? প্রাকৃতিক ভাবে প্রতিরোধের উপায় জানুন



টাইপ ১ ডায়াবেটিস কেন ঘটে এবং কাদের বেশি ঝুঁকি থাকে?

টাইপ ১ ডায়াবেটিস (T1D) একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন-উৎপাদনকারী বিটা কোষ ধ্বংস করে দেয়। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে শুরু করে। এর সঠিক কারণ এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে এটি জিনগত এবং পরিবেশগত উপাদানের সংমিশ্রণে ঘটে। কিছু মানুষ যারা কিছু নির্দিষ্ট জিনের কারণে T1D-এর জন্য predisposed (প্রবণ) থাকে, তাদের জন্য এই রোগের ঝুঁকি বেশি।


টাইপ ১ ডায়াবেটিসে ঝুঁকির কিছু মূল কারণ:


  • জেনেটিক বা পারিবারিক ইতিহাস: যদি পরিবারের কোনো সদস্য এই রোগে আক্রান্ত হন, তবে তাদের মধ্যে ঝুঁকি বাড়ে।
  • পরিবেশগত কারণ: ভাইরাস সংক্রমণ বা কিছু পরিবেশগত পরিস্থিতি রোগের শুরুতে ভূমিকা রাখতে পারে।

এই রোগ সাধারণত শিশু ও তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়, তবে যেকোনো বয়সেও এটি শুরু হতে পারে।


টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মধ্যে পার্থক্য

বৈশিষ্ট্য
টাইপ ১ ডায়াবেটিস
টাইপ ২ ডায়াবেটিস
কারণ
অটোইমিউন রোগ, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ইনসুলিন-উৎপাদনকারী কোষ ধ্বংস করে
ইনসুলিন প্রতিরোধ বা শরীরের ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়
প্রাথমিক রোগী
সাধারণত শিশু ও তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক
সাধারণত ৪০ বছরের বেশি বয়সী প্রাপ্তবয়স্ক
উপসর্গের শুরু
দ্রুত (সপ্তাহ বা মাসের মধ্যে)
ধীরে ধীরে (কয়েক বছর ধরে)
প্রতিরোধ
প্রতিরোধের উপায় নেই
ওজন নিয়ন্ত্রণ, শারীরিক কার্যকলাপ, সঠিক খাদ্যাভ্যাস প্রভৃতি প্রতিরোধ করতে পারে
চিকিৎসা
ইনসুলিন থেরাপি
জীবনযাত্রার পরিবর্তন, ওষুধ বা ইনসুলিন থেরাপি
ঝুঁকির ফ্যাক্টর
জেনেটিক এবং পরিবেশগত কারণ
স্থূলতা, অপর্যাপ্ত শারীরিক কার্যকলাপ, অপর্যাপ্ত খাদ্যাভ্যাস


টাইপ ১ ডায়াবেটিসে ইনসুলিন তৈরি না হওয়ায় রোগীকে ইনসুলিন গ্রহণ করতে হয়, whereas টাইপ ২ ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না বা যথেষ্ট পরিমাণে তৈরি হয় না, তবে এটি প্রাথমিকভাবে জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।


ডায়াবেটিসের লক্ষণ ও উপসর্গ:

ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণগুলি শরীরের ইনসুলিনের অভাব বা অসম্পূর্ণ কার্যকারিতার কারণে দেখা দেয়। এর মধ্যে অতিরিক্ত তৃষ্ণা (পলিডিপসিয়া), বারবার প্রস্রাব (পলিউরিয়া), ওজন হ্রাস, অতিরিক্ত ক্লান্তি, ঝাপসা দেখা, এবং ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া উল্লেখযোগ্য।


টাইপ ১ ডায়াবেটিস সাধারণত শৈশব বা বয়ঃসন্ধিকালে শুরু হয় এবং এতে রক্তে শর্করার পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে যায়। শিশুদের মধ্যে আরও লক্ষণ হতে পারে যেমন ক্ষুধা বৃদ্ধি, ঝাপসা দৃষ্টি, এবং ত্বকের সংক্রমণ। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই লক্ষণগুলি ধীরে ধীরে দেখা দেয় এবং প্রায়ই ভুলভাবে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হিসেবে চিহ্নিত হয়।


ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস হল একটি গুরুতর অবস্থা যা ইনসুলিনের অভাবের কারণে ঘটে এবং এতে ফলের গন্ধ, মানসিক বিভ্রান্তি, ক্রমাগত ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ থাকতে পারে।


কারণসমূহ:

টাইপ ১ ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ হল β-কোষ ধ্বংস, যা ইনসুলিন উৎপাদনের জন্য দায়ী। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া কারণে হয়, যেখানে শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থা β-কোষকে আক্রমণ করে।


পরিবেশগত এবং জেনেটিক কারণ:

বিভিন্ন পরিবেশগত ঝুঁকির সাথে টাইপ ১ ডায়াবেটিসের সম্পর্ক রয়েছে, তবে এর কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। জেনেটিক উপাদানও এই রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে, বিশেষত HLA-DRB1, HLA-DQA1 এবং HLA-DQB1 জিনের পরিবর্তনের কারণে।


রাসায়নিক ও ওষুধ:

কিছু ওষুধ, যেমন অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ ডিডানোসিন এবং পেন্টামিডিন, β-কোষের ক্ষতি করতে পারে এবং টাইপ ১ ডায়াবেটিস সৃষ্টি করতে পারে।


অস্ত্রোপচার:

অগ্ন্যাশয়ের অংশ অপসারণের কারণে প্যানক্রিয়াটোজেনিক ডায়াবেটিস হতে পারে, যা টাইপ ১ ডায়াবেটিসের এক প্রকার।


টাইপ ১ ডায়াবেটিসের জটিলতা

টাইপ ১ ডায়াবেটিস দীর্ঘকাল ধরে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকার কারণে কিছু গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:


কীটোএসিডোসিস (ডায়াবেটিক কোমা): রক্তে ইনসুলিনের অভাব হলে শরীর চর্বি পুড়িয়ে শক্তি উৎপাদন করতে শুরু করে, যার ফলে কীটোন নামে বিষাক্ত পদার্থ সৃষ্টি হয়। এটি রক্তের এসিডিক স্তর বাড়িয়ে কোমা বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এটি টাইপ ১ ডায়াবেটিসের সবচেয়ে গুরুতর জটিলতা।


স্নায়বিক ও কিডনি সমস্যা: দীর্ঘমেয়াদী উচ্চ রক্তশর্করা স্নায়ু ও কিডনির ক্ষতি করতে পারে। নানান ধরনের স্নায়বিক সমস্যা যেমন পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি (পা এবং হাতের স্নায়ুর সমস্যা) দেখা দিতে পারে, এবং কিডনির কার্যকারিতা কমে যেতে পারে, যা কিডনি অকার্যকর হতে পারে।


চোখের সমস্যা (রেটিনোপ্যাথি): রক্তে উচ্চ শর্করা দীর্ঘ সময় ধরে থাকার কারণে চোখের রেটিনা (চোখের পেছনের অংশ) ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা অন্ধত্ব পর্যন্ত যেতে পারে। এটি রেটিনোপ্যাথি নামে পরিচিত।


হার্টের সমস্যা: টাইপ ১ ডায়াবেটিসের কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক, এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া, ধমনীর সঙ্কীর্ণতা বা অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হতে পারে, যা হার্টের আক্রমণ বা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।


চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা

টাইপ ১ ডায়াবেটিসের চিকিৎসার উদ্দেশ্য হলো রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং সঠিক জীবনযাপন নিশ্চিত করা।


ইনসুলিন থেরাপি: ইনসুলিন হল টাইপ ১ ডায়াবেটিসের প্রধান চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ইনসুলিন ইনজেকশন বা ইনসুলিন পাম্পের মাধ্যমে সঠিক ডোজ গ্রহণ করা হয়।

রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদ্য পরিকল্পনা: খাদ্য গ্রহণের সময় শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি সুষম খাদ্য পরিকল্পনা জরুরি। খাবারের পরিমাণ এবং খাদ্য উপাদান যেমন কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যাটের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।

ব্যায়াম ও জীবনধারা পরিবর্তন: নিয়মিত ব্যায়াম এবং শারীরিক কার্যকলাপ রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। সঠিক জীবনযাপন যেমন তাজা বাতাসে হাঁটা, হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার গুরুত্ব: রক্তে শর্করা, হিমোগ্লোবিন A1C, কিডনি ফাংশন, চোখের পরীক্ষা এবং স্নায়বিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিয়মিতভাবে করা উচিত।


প্রাকৃতিক উপায়ে টাইপ ১ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ

প্রাকৃতিক উপায়গুলিও টাইপ ১ ডায়াবেটিসের ব্যবস্থাপনায় সহায়ক হতে পারে, যদিও এগুলো চিকিৎসার বিকল্প নয়, বরং সহায়ক ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে।


স্বাস্থ্যকর খাবার (কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের খাবার): কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের খাবার (যেমন বাদাম, শাকসবজি, শস্যজাত খাবার) রক্তে শর্করার দ্রুত বৃদ্ধি রোধ করে। এগুলো ধীরে ধীরে রক্তে শর্করা ছাড়া হয়, যার ফলে রক্তের সুগার স্থিতিশীল থাকে।

ভেষজ চিকিৎসা: কিছু ভেষজ উপাদান যেমন দারুচিনি, মেথি, এবং আমপাতা টাইপ ১ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। এরা ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।

যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন: যোগব্যায়াম এবং মেডিটেশন মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, যা রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি মনোসংযোগ এবং শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ কমানো: পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে শরীরের ইনসুলিন প্রতিক্রিয়া বৃদ্ধি পায়, যা টাইপ ১ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।


এভাবে টাইপ ১ ডায়াবেটিসের নিয়মিত চিকিৎসা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, এবং প্রাকৃতিক উপায়গুলির সাহায্যে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।


Visit Our Unani Medicine Shop: Unani Shop | Diabetes Medicine | Unani Skin Care & Hair Care | Health & Wellness | Weight Gainer Supplement | Sexual Wellness