Created : Thu Aug 15 2024
পাইলস, যা হেমোরয়েডস নামেও পরিচিত, একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা যা মলদ্বার এবং নিচের মলদ্বারের শিরাগুলির ফুলে যাওয়া ও প্রসারিত হওয়ার কারণে হয়। এই শিরাগুলির ফুলে যাওয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন অতিরিক্ত চাপ, দীর্ঘ সময় বসে থাকা, গর্ভাবস্থা, অথবা অপর্যাপ্ত ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া। পাইলস, যা সাধারণত অর্শ্বরোগ নামে পরিচিত, বৃহদান্ত্রের শেষাংশে রেকটামের ভেতর ও বাইরের কুশনের মতো রক্তশিরার একটি জালিকা থাকে। এই শিরাগুলি স্বাভাবিকভাবে সংকুচিত ও প্রসারিত হয় প্রয়োজন অনুসারে, কিন্তু যখন পায়ুপথে এই শিরাগুলিতে সংক্রমণ বা প্রদাহ ঘটে এবং অতিরিক্ত চাপ পড়ে, তখন এই শিরাগুলির প্রদাহ ঘটে। এই অবস্থাকেই আমরা পাইলস বা হেমোরয়েডস হিসেবে জানি, যা সাধারণ ভাষায় অর্শরোগ নামে পরিচিত।
১. আভ্যন্তরীণ পাইলস: মলদ্বারের দু-তিন সেন্টিমিটার ভেতরের অংশে যে পাইলস থাকে, তাকে আভ্যন্তরীণ পাইলস বলা হয়। সাধারণত আভ্যন্তরীণ পাইলস প্রাথমিকভাবে কোন লক্ষণ প্রকাশ করে না, তবে এটি বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। আভ্যন্তরীণ পাইলসের গঠন ও আচরণের উপর ভিত্তি করে চারটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে।
২. বহিঃস্থ পাইলস: মলদ্বারের বাইরের পাইলসকে বহিঃস্থ পাইলস বলা হয়। কখনও কখনও আভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ পাইলস একসঙ্গে উপস্থিত থাকতে পারে।
মলত্যাগের সময় চাপ দেওয়ার বদ অভ্যাস ও কোষ্ঠকাঠিন্য পাইলস হওয়ার প্রধান কারণ। কিছু ক্ষেত্রে পাইলস বংশগত হতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে এবং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া স্থূলকায় ব্যক্তিরা, যকৃৎ রোগী, বৃহদান্ত্রের প্রদাহ, বৃহদান্ত্র ও মলাশয়ের ক্যান্সার, মলদ্বারের পূর্বের অপারেশন, আইবিএস (ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম) ইত্যাদি রোগ থাকলে পাইলস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
মলত্যাগের সময় রক্তপাত পাইলসের প্রধান উপসর্গ। মলের সাথে তাজা রক্ত যাওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। রোগীরা অনেক সময় ফিনকি দিয়ে অথবা টপ টপ করে রক্তপাতের অভিযোগ করেন। এছাড়া মলদ্বারে অতিরিক্ত মাংস, চুলকানি, ভেজা ভাব এবং অস্বস্তি ইত্যাদি উপসর্গ থাকতে পারে। পাইলসের অন্যান্য লক্ষণ হিসেবে মলত্যাগের পর ব্যথা ও অস্বস্তি, মলদ্বারের আশেপাশে স্ফীতির উপস্থিতি, এবং মাঝে মাঝে শ্লেষ্মার আধিক্য দেখা যেতে পারে।
পাইলসে সাধারণত ব্যথা হয় না। তবে জটিলতা, যেমন রক্ত জমাট বাঁধা, রক্তনালী বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি ঘটলে ব্যথা হতে পারে। রোগ নির্ণয় করতে চিকিৎসকরা রোগীর উপসর্গগুলো শুনে মলদ্বার পরীক্ষা করেন। এই পরীক্ষার জন্য একটি ছোট যন্ত্র (প্রোক্টসকোপ) ব্যবহার করে মলদ্বারের ভেতরে দেখা হয়। প্রয়োজন হলে কোলনস্কোপি, রক্ত পরীক্ষা ইত্যাদি পরীক্ষা করা হতে পারে।
পাইলসের চিকিৎসা প্রকারভেদে বিভিন্ন হতে পারে। প্রচলিত কয়েকটি চিকিৎসা পদ্ধতি হল:
মলত্যাগের সময় চাপ দেওয়ার বদভ্যাস ত্যাগ এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় টয়লেটে বসে থাকা ইত্যাদি বদভ্যাস ত্যাগ করা পাইলস চিকিৎসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রচুর পানি ও তরলজাতীয় খাবার পান করা উচিত। খাদ্যতালিকায় আঁশজাতীয় খাবার যেমন শাকসবজি, ইসপগুলের ভুষি ইত্যাদি এবং মাছ-মাংস পরিমাণ মতো রাখতে হবে। এই নিয়ম মেনে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ (মলদ্বারের মলম, ক্রিম, ঢুশ, ওষুধ ইত্যাদি) ব্যবহার করে শতকরা ৮০ ভাগ পাইলস বিনা অপারেশনে চিকিৎসা সম্ভব।
শ্রেণি ১ ও অধিকাংশ শ্রেণি ২ পাইলস এভাবে চিকিৎসা করা যায়। তবে একাধিক স্থানে শ্রেণি ১ পাইলস থাকলে কখনও কখনও লংগো অপারেশন করা হতে পারে।
শ্রেণি ২ ও শ্রেণি ৩ পাইলস রিং লাইগেশন অথবা অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে তা চিকিৎসক রোগীর সমস্যার ওপর নির্ভর করে ঠিক করে থাকেন।
শ্রেণি ৪ পাইলসে অপারেশন ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। বহিঃস্থ পাইলসের ক্ষেত্রে অপারেশন প্রয়োজন হয়।
হেমোরয়েড বা পাইলসের লক্ষণগুলো সাধারণত নিম্নলিখিত হতে পারে:
মলদ্বার থেকে রক্তপাত: মলত্যাগের সময় মলদ্বার থেকে রক্তপাত দেখা যেতে পারে, যা সাধারণত উজ্জ্বল লাল রঙের হয়।
মলদ্বারের চারপাশে ব্যথা: বাহ্যিক হেমোরয়েডসের কারণে মলদ্বারের চারপাশে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
ফুলে ওঠা বা স্ফীতি: মলদ্বারের ভিতরে বা বাইরের শিরাগুলির ফুলে ওঠা বা স্ফীতি হতে পারে, যা দেখতে ছোট বা বড় গুটির মতো হতে পারে।
চুলকানি বা জ্বালা: মলদ্বারের আশেপাশে চুলকানি, জ্বালা, বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
মলদ্বারের ভিতরে চাপ বা অস্বস্তি: অভ্যন্তরীণ হেমোরয়েডসের কারণে মলদ্বারের ভিতরে চাপ বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
মলদ্বার থেকে মিউকাস নিঃসরণ: কিছু ক্ষেত্রে, মলদ্বার থেকে অতিরিক্ত মিউকাস নিঃসরণ হতে পারে।
মলদ্বার থেকে ছোট গুটি বা টিউমার অনুভূতি: বাহ্যিক হেমোরয়েডসের কারণে মলদ্বারের বাইরের অংশে একটি ছোট গুটি বা টিউমার অনুভূতি হতে পারে।
হেমোরয়েড বা পাইলসের কারণগুলো বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সাধারণভাবে, এই সমস্যাটি ঘটে যখন মলদ্বার ও নিচের মলদ্বারের শিরাগুলিতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং তারা ফুলে যায়। এর কিছু প্রধান কারণ হলো:
কোষ্ঠকাঠিন্য: দীর্ঘ সময় কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ পড়ার কারণে শিরাগুলির ফুলে ওঠা ঘটে।
দীর্ঘ সময় বসে থাকা: দীর্ঘ সময় এক স্থানে বসে থাকা, বিশেষ করে অফিসের কাজ বা গাড়ি চালানোর সময়, মলদ্বারের শিরাগুলিতে চাপ বাড়াতে পারে।
অতিরিক্ত চাপ: ভারী বস্তু উত্তোলন, কাঁপানো, বা মলদ্বারের উপর অতিরিক্ত চাপ দেওয়া পাইলসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত চাপ, হরমোনাল পরিবর্তন এবং বৃদ্ধি পায় এমন প্রেশার মলদ্বারের শিরাগুলিতে ফুলে ওঠার কারণ হতে পারে।
অপর্যাপ্ত ফাইবারযুক্ত খাবার: খাদ্যে ফাইবারের অভাব কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করতে পারে, যা পাইলসের ঝুঁকি বাড়ায়।
ওজন বৃদ্ধি: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা মলদ্বারের শিরাগুলিতে অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে, যা পাইলসের কারণ হতে পারে।
মলদ্বারের প্রদাহ: মলদ্বারের তীব্র প্রদাহ বা সংক্রমণও পাইলসের সৃষ্টি করতে পারে।
জেনেটিক্স: কিছু মানুষের মধ্যে পাইলসের জন্য জেনেটিক প্রবণতা থাকতে পারে, যা তাদের পাইলসের ঝুঁকি বাড়ায়।
পাইলস এড়াতে জীবনযাত্রায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন করা যেতে পারে। নিচে কিছু সুপারিশ দেওয়া হলো:
পুষ্টিকর খাবার খান: খাদ্যতালিকায় বেশি পরিমাণে ফাইবার যুক্ত খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন, যেমন ফল, সবজি, পুরো শস্য, এবং বাদাম। ফাইবার পরিপাকতন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন (যথাযথভাবে ৮-১০ গ্লাস)। এটি শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখতে এবং পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করবে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন: দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা অন্য কোনো শরীরচর্চা করুন। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য এড়ানোর জন্য সতর্কতা অবলম্বন করুন: যদি আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিন। দীর্ঘ সময় ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকা পাইলসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
যতটা সম্ভব ঝুঁকি কমান: ভারী বস্তু উত্তোলনের সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন এবং দীর্ঘ সময় বসে না থেকে মাঝে মাঝে দাঁড়ান বা হাঁটুন।
স্বাস্থ্যসম্মত শৌচচর্চা করুন: শৌচালয়ের ব্যবহার সময় দীর্ঘ সময় বসে না থেকে যত দ্রুত সম্ভব মল ত্যাগ করুন। অতিরিক্ত চাপ দেওয়া এড়ানোর চেষ্টা করুন।
মদ্যপান এবং ধূমপান পরিহার করুন: মদ্যপান এবং ধূমপান পাইলসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, তাই এগুলো থেকে বিরত থাকুন।
চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন: যদি পাইলসের লক্ষণ দেখা দেয় বা পরিস্থিতি খারাপ হয়, তবে সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
পাইলসের জন্য কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা ও প্রাথমিক ব্যবস্থা নিচে উল্লেখ করা হলো:
ঘরোয়া চিকিৎসা
প্রাথমিক ব্যবস্থা
পাইলসনিক্স (Pilesnix) একটি উনানী ঔষধ যা পাইলস বা হেমরয়েডসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত প্রাকৃতিক উপাদান দ্বারা প্রস্তুত করা হয় এবং এর কার্যকারিতা বিভিন্ন উপাদানের মিশ্রণের ওপর নির্ভর করে।
পাইলসনিক্সের কিছু বৈশিষ্ট্য:
হেমোরয়েড বা পাইলস নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসক সাধারণত নিচের পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করেন:
পাইলস বা হেমোরয়েডস প্রতিরোধের জন্য কিছু সহজ এবং কার্যকরী ব্যবস্থা নিচে উল্লেখ করা হলো:
Rupayan FPAB Tower, 7th Floor (E-7), 2 Naya Paltan, Culvert Road, Dhaka-1000
+8801618883013
renixcare@gmail.com