0

পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

Created : Thu Aug 15 2024

পাইলস

পাইলস, যা হেমোরয়েডস নামেও পরিচিত, একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা যা মলদ্বার এবং নিচের মলদ্বারের শিরাগুলির ফুলে যাওয়া ও প্রসারিত হওয়ার কারণে হয়। এই শিরাগুলির ফুলে যাওয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন অতিরিক্ত চাপ, দীর্ঘ সময় বসে থাকা, গর্ভাবস্থা, অথবা অপর্যাপ্ত ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া। পাইলস, যা সাধারণত অর্শ্বরোগ নামে পরিচিত, বৃহদান্ত্রের শেষাংশে রেকটামের ভেতর ও বাইরের কুশনের মতো রক্তশিরার একটি জালিকা থাকে। এই শিরাগুলি স্বাভাবিকভাবে সংকুচিত ও প্রসারিত হয় প্রয়োজন অনুসারে, কিন্তু যখন পায়ুপথে এই শিরাগুলিতে সংক্রমণ বা প্রদাহ ঘটে এবং অতিরিক্ত চাপ পড়ে, তখন এই শিরাগুলির প্রদাহ ঘটে। এই অবস্থাকেই আমরা পাইলস বা হেমোরয়েডস হিসেবে জানি, যা সাধারণ ভাষায় অর্শরোগ নামে পরিচিত।


পাইলস দুই প্রকার- ১. আভ্যন্তরীণ পাইলস, ২. বহিস্থ পাইলস।


১. আভ্যন্তরীণ পাইলস: মলদ্বারের দু-তিন সেন্টিমিটার ভেতরের অংশে যে পাইলস থাকে, তাকে আভ্যন্তরীণ পাইলস বলা হয়। সাধারণত আভ্যন্তরীণ পাইলস প্রাথমিকভাবে কোন লক্ষণ প্রকাশ করে না, তবে এটি বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। আভ্যন্তরীণ পাইলসের গঠন ও আচরণের উপর ভিত্তি করে চারটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে।


  • শ্রেণি ১: সম্পূর্ণ মলদ্বারের ভেতরের অংশে অবস্থান করে এবং বাহির থেকে বোঝা যায় না।
  • শ্রেণি ২: মলদ্বারের ভেতরে থাকে, তবে মলত্যাগের সময় বাহিরে বের হয়ে আসে এবং পরে নিজে থেকেই ভেতরে ফিরে যায়।
  • শ্রেণি ৩: মলদ্বারের ভেতর থাকে, মলত্যাগের সময় বাহিরে বের হয়ে আসে কিন্তু পরে নিজে থেকে ভেতরে চলে যায় না; আঙুল দিয়ে ঠেলা দিতে হয়।
  • শ্রেণি ৪: মলদ্বারের ভেতর থেকে সবসময় বাহিরে বের হয়ে থাকে এবং ঠেলে ভেতরে দেওয়া যায় না।


২. বহিঃস্থ পাইলস: মলদ্বারের বাইরের পাইলসকে বহিঃস্থ পাইলস বলা হয়। কখনও কখনও আভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ পাইলস একসঙ্গে উপস্থিত থাকতে পারে।


মলত্যাগের সময় চাপ দেওয়ার বদ অভ্যাস ও কোষ্ঠকাঠিন্য পাইলস হওয়ার প্রধান কারণ। কিছু ক্ষেত্রে পাইলস বংশগত হতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে এবং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া স্থূলকায় ব্যক্তিরা, যকৃৎ রোগী, বৃহদান্ত্রের প্রদাহ, বৃহদান্ত্র ও মলাশয়ের ক্যান্সার, মলদ্বারের পূর্বের অপারেশন, আইবিএস (ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম) ইত্যাদি রোগ থাকলে পাইলস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।


মলত্যাগের সময় রক্তপাত পাইলসের প্রধান উপসর্গ। মলের সাথে তাজা রক্ত যাওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। রোগীরা অনেক সময় ফিনকি দিয়ে অথবা টপ টপ করে রক্তপাতের অভিযোগ করেন। এছাড়া মলদ্বারে অতিরিক্ত মাংস, চুলকানি, ভেজা ভাব এবং অস্বস্তি ইত্যাদি উপসর্গ থাকতে পারে। পাইলসের অন্যান্য লক্ষণ হিসেবে মলত্যাগের পর ব্যথা ও অস্বস্তি, মলদ্বারের আশেপাশে স্ফীতির উপস্থিতি, এবং মাঝে মাঝে শ্লেষ্মার আধিক্য দেখা যেতে পারে।


পাইলসে সাধারণত ব্যথা হয় না। তবে জটিলতা, যেমন রক্ত জমাট বাঁধা, রক্তনালী বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি ঘটলে ব্যথা হতে পারে। রোগ নির্ণয় করতে চিকিৎসকরা রোগীর উপসর্গগুলো শুনে মলদ্বার পরীক্ষা করেন। এই পরীক্ষার জন্য একটি ছোট যন্ত্র (প্রোক্টসকোপ) ব্যবহার করে মলদ্বারের ভেতরে দেখা হয়। প্রয়োজন হলে কোলনস্কোপি, রক্ত পরীক্ষা ইত্যাদি পরীক্ষা করা হতে পারে।


পাইলসের চিকিৎসা প্রকারভেদে বিভিন্ন হতে পারে। প্রচলিত কয়েকটি চিকিৎসা পদ্ধতি হল:

  • রক্ষণশীল পদ্ধতি : অভ্যাস পরিবর্তন ও ওষুধের মাধ্যমে।
  • ইঞ্জেকশন: পাইলসের আকার কমানোর জন্য।
  • রিং লাইগেশন: একটি রিং ব্যবহার করে পাইলসের রক্ত সরবরাহ বন্ধ করা।
  • অপারেশন: সাধারণ পদ্ধতি অথবা লংগো (এক প্রকার যন্ত্র) ব্যবহার করে।
  • লেজার ব্যবহার: লেজারের সাহায্যে পাইলসের চিকিৎসা।
  • আল্ট্রাসনোগ্রাফির সাহায্যে রক্তনালী বন্ধকরণ: এই পদ্ধতি আমাদের দেশে তেমন জনপ্রিয় নয়।


মলত্যাগের সময় চাপ দেওয়ার বদভ্যাস ত্যাগ এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় টয়লেটে বসে থাকা ইত্যাদি বদভ্যাস ত্যাগ করা পাইলস চিকিৎসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রচুর পানি ও তরলজাতীয় খাবার পান করা উচিত। খাদ্যতালিকায় আঁশজাতীয় খাবার যেমন শাকসবজি, ইসপগুলের ভুষি ইত্যাদি এবং মাছ-মাংস পরিমাণ মতো রাখতে হবে। এই নিয়ম মেনে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ (মলদ্বারের মলম, ক্রিম, ঢুশ, ওষুধ ইত্যাদি) ব্যবহার করে শতকরা ৮০ ভাগ পাইলস বিনা অপারেশনে চিকিৎসা সম্ভব।


শ্রেণি ১ ও অধিকাংশ শ্রেণি ২ পাইলস এভাবে চিকিৎসা করা যায়। তবে একাধিক স্থানে শ্রেণি ১ পাইলস থাকলে কখনও কখনও লংগো অপারেশন করা হতে পারে।


শ্রেণি ২ ও শ্রেণি ৩ পাইলস রিং লাইগেশন অথবা অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে তা চিকিৎসক রোগীর সমস্যার ওপর নির্ভর করে ঠিক করে থাকেন।


শ্রেণি ৪ পাইলসে অপারেশন ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। বহিঃস্থ পাইলসের ক্ষেত্রে অপারেশন প্রয়োজন হয়।


হেমোরয়েড বা পাইলসের লক্ষণগুলো কী কী?

হেমোরয়েড বা পাইলসের লক্ষণগুলো সাধারণত নিম্নলিখিত হতে পারে:


মলদ্বার থেকে রক্তপাত: মলত্যাগের সময় মলদ্বার থেকে রক্তপাত দেখা যেতে পারে, যা সাধারণত উজ্জ্বল লাল রঙের হয়।

মলদ্বারের চারপাশে ব্যথা: বাহ্যিক হেমোরয়েডসের কারণে মলদ্বারের চারপাশে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

ফুলে ওঠা বা স্ফীতি: মলদ্বারের ভিতরে বা বাইরের শিরাগুলির ফুলে ওঠা বা স্ফীতি হতে পারে, যা দেখতে ছোট বা বড় গুটির মতো হতে পারে।

চুলকানি বা জ্বালা: মলদ্বারের আশেপাশে চুলকানি, জ্বালা, বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।

মলদ্বারের ভিতরে চাপ বা অস্বস্তি: অভ্যন্তরীণ হেমোরয়েডসের কারণে মলদ্বারের ভিতরে চাপ বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।

মলদ্বার থেকে মিউকাস নিঃসরণ: কিছু ক্ষেত্রে, মলদ্বার থেকে অতিরিক্ত মিউকাস নিঃসরণ হতে পারে।

মলদ্বার থেকে ছোট গুটি বা টিউমার অনুভূতি: বাহ্যিক হেমোরয়েডসের কারণে মলদ্বারের বাইরের অংশে একটি ছোট গুটি বা টিউমার অনুভূতি হতে পারে।


হেমোরয়েড বা পাইলসের কারণ কী?

হেমোরয়েড বা পাইলসের কারণগুলো বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সাধারণভাবে, এই সমস্যাটি ঘটে যখন মলদ্বার ও নিচের মলদ্বারের শিরাগুলিতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং তারা ফুলে যায়। এর কিছু প্রধান কারণ হলো:


কোষ্ঠকাঠিন্য: দীর্ঘ সময় কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ পড়ার কারণে শিরাগুলির ফুলে ওঠা ঘটে।


দীর্ঘ সময় বসে থাকা: দীর্ঘ সময় এক স্থানে বসে থাকা, বিশেষ করে অফিসের কাজ বা গাড়ি চালানোর সময়, মলদ্বারের শিরাগুলিতে চাপ বাড়াতে পারে।


অতিরিক্ত চাপ: ভারী বস্তু উত্তোলন, কাঁপানো, বা মলদ্বারের উপর অতিরিক্ত চাপ দেওয়া পাইলসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।


গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত চাপ, হরমোনাল পরিবর্তন এবং বৃদ্ধি পায় এমন প্রেশার মলদ্বারের শিরাগুলিতে ফুলে ওঠার কারণ হতে পারে।


অপর্যাপ্ত ফাইবারযুক্ত খাবার: খাদ্যে ফাইবারের অভাব কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করতে পারে, যা পাইলসের ঝুঁকি বাড়ায়।


ওজন বৃদ্ধি: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা মলদ্বারের শিরাগুলিতে অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে, যা পাইলসের কারণ হতে পারে।


মলদ্বারের প্রদাহ: মলদ্বারের তীব্র প্রদাহ বা সংক্রমণও পাইলসের সৃষ্টি করতে পারে।


জেনেটিক্স: কিছু মানুষের মধ্যে পাইলসের জন্য জেনেটিক প্রবণতা থাকতে পারে, যা তাদের পাইলসের ঝুঁকি বাড়ায়।


পাইলস এড়াতে জীবনযাত্রার পরিবর্তন


পাইলস এড়াতে জীবনযাত্রায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন করা যেতে পারে। নিচে কিছু সুপারিশ দেওয়া হলো:


পুষ্টিকর খাবার খান: খাদ্যতালিকায় বেশি পরিমাণে ফাইবার যুক্ত খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন, যেমন ফল, সবজি, পুরো শস্য, এবং বাদাম। ফাইবার পরিপাকতন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক।


পর্যাপ্ত পানি পান করুন: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন (যথাযথভাবে ৮-১০ গ্লাস)। এটি শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখতে এবং পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করবে।


নিয়মিত ব্যায়াম করুন: দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা অন্য কোনো শরীরচর্চা করুন। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।


কোষ্ঠকাঠিন্য এড়ানোর জন্য সতর্কতা অবলম্বন করুন: যদি আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিন। দীর্ঘ সময় ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকা পাইলসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।


যতটা সম্ভব ঝুঁকি কমান: ভারী বস্তু উত্তোলনের সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন এবং দীর্ঘ সময় বসে না থেকে মাঝে মাঝে দাঁড়ান বা হাঁটুন।


স্বাস্থ্যসম্মত শৌচচর্চা করুন: শৌচালয়ের ব্যবহার সময় দীর্ঘ সময় বসে না থেকে যত দ্রুত সম্ভব মল ত্যাগ করুন। অতিরিক্ত চাপ দেওয়া এড়ানোর চেষ্টা করুন।


মদ্যপান এবং ধূমপান পরিহার করুন: মদ্যপান এবং ধূমপান পাইলসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, তাই এগুলো থেকে বিরত থাকুন।


চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন: যদি পাইলসের লক্ষণ দেখা দেয় বা পরিস্থিতি খারাপ হয়, তবে সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


ঘরোয়া চিকিৎসা ও প্রাথমিক ব্যবস্থা


পাইলসের জন্য কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা ও প্রাথমিক ব্যবস্থা নিচে উল্লেখ করা হলো:


ঘরোয়া চিকিৎসা


  • ইউসালফার চা: ইউসালফার চা পাইলসের আরামদায়ক প্রভাব দিতে পারে। এটি রক্তসঞ্চালন উন্নত করতে এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
  • গরম পানি: গরম পানির স্নান করতে পারেন, যা পাইলসের ব্যথা কমাতে এবং আরাম প্রদান করতে সাহায্য করে। ১৫-২০ মিনিট এই গরম পানিতে বসে থাকুন।
  • এলোভেরা জেল: এলোভেরা জেল পাইলসের প্রদাহ এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। সরাসরি এলোভেরা জেল আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করুন।
  • ক্যামোমাইল চা: ক্যামোমাইল চা একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি যা পাইলসের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  • বাটারমিল্ক: প্রাতঃরাশে এক কাপ বাটারমিল্ক পান করলে পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।


প্রাথমিক ব্যবস্থা


  • আচরণ পরিবর্তন: কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে বেশি ফাইবার যুক্ত খাবার খান এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
  • মল ত্যাগের সময় সতর্কতা: মল ত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ দেবেন না এবং দীর্ঘ সময় ধরে শৌচালয়ে বসে থাকবেন না।
  • উচ্চ তাপমাত্রার খাবার এড়ানো: অতিরিক্ত গরম বা স্পাইসি খাবার পাইলসের অবস্থা খারাপ করতে পারে। তাই এসব খাবার কম খান।
  • শারীরিক কার্যক্রম: নিয়মিত ব্যায়াম করুন, বিশেষ করে হাঁটা বা সাঁতার কাটা। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সহায়ক।
  • স্ট্রেস কমানো: মানসিক চাপ কমানোর জন্য যোগব্যায়াম বা ধ্যান করতে পারেন, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সহায়ক।
  • শৌচচর্চা: শৌচাচ্ছন্নতা বজায় রাখুন এবং অতিরিক্ত শক্তি খরচ না করে সঠিকভাবে মল ত্যাগ করুন।


 পাইলসের ঔষধ


পাইলসনিক্স (Pilesnix) একটি উনানী ঔষধ যা পাইলস বা হেমরয়েডসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত প্রাকৃতিক উপাদান দ্বারা প্রস্তুত করা হয় এবং এর কার্যকারিতা বিভিন্ন উপাদানের মিশ্রণের ওপর নির্ভর করে।


পাইলসনিক্সের কিছু বৈশিষ্ট্য:


  • প্রাকৃতিক উপাদান: এটি সাধারণত প্রাকৃতিক এবং ঔষধি উপাদান দিয়ে তৈরি যা পাইলসের লক্ষণগুলি উপশমে সহায়ক।
  • প্রদাহ হ্রাস: পাইলসনিক্সের মধ্যে থাকা উপাদানগুলি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করে।
  • বেদনা ও অস্বস্তি কমানো: এটি পাইলসের কারণে হওয়া বেদনা এবং অস্বস্তি কমাতে সহায়ক হতে পারে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ: এটি কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়ক যা পাইলসের একটি সাধারণ কারণ।


কিভাবে হেমোরয়েড বা পাইলস নির্ণয় করা হয়?

হেমোরয়েড বা পাইলস নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসক সাধারণত নিচের পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করেন:


১. পুঙ্খানুপুঙ্খ চিকিৎসা ইতিহাস

  • রোগীর সাম্প্রতিক লক্ষণ, লক্ষণের সময়কাল, পরিবারের ইতিহাস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়।


২. শারীরিক পরীক্ষা

  • বাহ্যিক হেমোরয়েডের জন্য: চিকিৎসক বাহ্যিকভাবে মলদ্বার এবং পাইলস অঞ্চলের চাক্ষুষ পরিদর্শন করতে পারেন।
  • অভ্যন্তরীণ হেমোরয়েডের জন্য: চিকিৎসক একটি গ্লাভড এবং লুব্রিকেটেড আঙুল দিয়ে মলদ্বারে পরীক্ষা করতে পারেন। এটি অভ্যন্তরীণ পাইলস এবং মলদ্বারের ভিতরের অবস্থার মূল্যায়ন করতে সহায়ক।


৩. ভিজ্যুয়াল/স্কোপিক পরিদর্শন

  • অ্যানোস্কোপ: একটি ছোট টিউব যা মলদ্বারের ভিতরে প্রবেশ করে, অভ্যন্তরীণ হেমোরয়েডস দেখতে এবং মূল্যায়ন করতে ব্যবহৃত হয়।
  • প্রোক্টোস্কোপ: মলদ্বার এবং নিচের মলাশয়ের অংশ দেখতে সাহায্য করে। এটি সাধারণত ১০-১৫ সেন্টিমিটার গভীর পর্যন্ত দেখতে সক্ষম।
  • সিগমায়েডোস্কোপ: মলদ্বার থেকে সিগময়েড কোলনের অংশ দেখতে ব্যবহৃত হয়। এটি বিশেষভাবে দরকারি যখন মলদ্বারের সমস্যার বাইরে অন্য কোনো সমস্যা থাকলে।


৪. অন্যান্য পরীক্ষা

  • কোলনোস্কোপি: যদি চিকিৎসক সন্দেহ করেন যে পাইলসের সাথে অন্য কোনো সমস্যা হতে পারে, যেমন কোলন বা রেকটামের রোগ, তাহলে কোলনোস্কোপি করা হতে পারে। এতে সম্পূর্ণ কোলন পরীক্ষা করা হয়।


৫. ল্যাবরেটরি পরীক্ষা

  • কিছু ক্ষেত্রে, মল বা রক্তের পরীক্ষা প্রয়োজন হতে পারে যদি চিকিৎসক রক্তাল্পতা বা অন্য কোনো স্বাস্থ্যের সমস্যা সনাক্ত করতে চান।


ঘরোয়া চিকিৎসা


  • ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য: ফল, সবজি, এবং পুরো শস্যের মতো ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।
  • পর্যাপ্ত পানি পান: দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত যাতে মল নরম থাকে।
  • গরম জলস্নান: প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট গরম পানির স্নান করুন যা ব্যথা এবং অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে।
  • আদা এবং হলুদ: এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলি পাইলসের প্রদাহ কমাতে সহায়ক।


ঔষধ

  • অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ: যেমন প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন, যা ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
  • টপিক্যাল ক্রিম ও মলম: পাইলসের স্থানীয় আরাম এবং প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, Preparation H বা Anusol।
  • ল্যাক্সেটিভস: কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়ক।


চিকিৎসা পদ্ধতি

  • ব্যান্ড লিগেশন: এই পদ্ধতিতে একটি রাবার ব্যান্ড পাইলসের ভিত্তিতে স্থাপন করা হয়, যা রক্তসঞ্চালন বন্ধ করে দেয় এবং পাইলস শুকিয়ে পড়ে।
  • সিনিওডেক্স (Sclerotherapy): একটি বিশেষ দ্রবণ পাইলসের ভিতরে ইনজেক্ট করা হয়, যা পাইলসের আকার ছোট করে এবং শুকিয়ে যায়।
  • ইলেক্ট্রোকোটারি: তাপ ব্যবহার করে পাইলসের অংশগুলি শুকানো এবং কমানো হয়।
  • লেজার থেরাপি: লেজার ব্যবহার করে পাইলসের অংশগুলি সরানো হয় এবং সেগুলির আরাম প্রদান করা হয়।


সার্জারি

  • স্টেপলিং: পাইলসের উচ্চতর ধাপগুলির জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি পাইলসের অংশগুলি তুলে এনে চেপে দেওয়া হয়।
  • হেমরয়েডেক্টমি: এটি একটি প্রধান সার্জারির পদ্ধতি যেখানে পাইলসের পুরো অংশ অপসারণ করা হয়। এটি সাধারণত গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী পাইলসের জন্য ব্যবহৃত হয়।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:

পাইলস বা হেমোরয়েডস প্রতিরোধের জন্য কিছু সহজ এবং কার্যকরী ব্যবস্থা নিচে উল্লেখ করা হলো:


ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য

  • ফাইবার গ্রহণ: প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রচুর ফাইবার যুক্ত খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন যেমন ফল, সবজি, ওটস, এবং পুরো শস্য। এটি মল নরম করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।


পর্যাপ্ত পানি পান

  • হাইড্রেশন: দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। পর্যাপ্ত পানি পান করার মাধ্যমে মল নরম থাকে এবং সহজে মলত্যাগ করা যায়।


নিয়মিত ব্যায়াম

  • শারীরিক কার্যক্রম: নিয়মিত ব্যায়াম করুন যেমন হাঁটা, সাঁতার কাটা বা হালকা যোগব্যায়াম। এটি অন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়।


বহু সময় ধরে বসে থাকা এড়ানো

  • মাঝে মাঝে বিরতি: দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকলে প্রতি ঘণ্টায় ৫-১০ মিনিটের জন্য উঠে দাঁড়ান এবং হাঁটুন। এটি মলদ্বারে চাপ কমাতে সাহায্য করে।


মলত্যাগের সময় সতর্কতা

  • মলত্যাগের সময় চাপ কমানো: মলত্যাগের সময় বেশি চাপ দেয়া এড়ানো উচিত। যদি মলত্যাগ কঠিন হয়, তাহলে ল্যাক্সেটিভস ব্যবহার করতে পারেন।


স্বাস্থ্যকর অভ্যাস

  • স্ট্রেস কমানো: মানসিক চাপ কমানোর জন্য যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করতে পারেন।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: মসলাযুক্ত এবং চর্বিযুক্ত খাবার কমানো এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা।


পর্যাপ্ত বিশ্রাম

  • বিশ্রাম: পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। এটি শরীরের সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।


প্যান্টি ও লিনেন পরিবর্তন

  • আরামদায়ক কাপড়: সুতির এবং আরামদায়ক অন্তর্বাস ব্যবহার করুন যাতে মলদ্বারে বেশি চাপ না পড়ে।


হাইজিন বজায় রাখা

  • মলদ্বারের পরিচ্ছন্নতা: মলদ্বার পরিষ্কার এবং শুকনো রাখা উচিত। কোমল টয়লেট পেপার ব্যবহার করুন এবং গরম জল দিয়ে ধোয়া যেতে পারে।


নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

  • চিকিৎসকের পরামর্শ: পাইলসের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং স্ক্রীনিং পাইলসের প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করতে সহায়ক হতে পারে।

NEWSLETTER

GET LATEST NEWS

© 2024 all rights reserved by Renix unani laboratories limited

PaypalVisaAmerican ExpressMastercard