renix logoShop Now
HomeUnani Treatment Natural Beauty TipsNatural AyurvedaUnani Health TipsNatural Weight Loss TipsWomen's HealthHealthy Lifestyle

© 2025 all rights reserved by Renix Care

BkashBkashBkashBkashPaypalVisaAmerican ExpressMastercard

কোমরের ব্যথা কমানোর উপায় ব্যায়াম

Created : Tue Aug 27 2024

কোমর ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা যা অনেক মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ক্রমাগত ঘটে। এটি শুধু অস্বস্তিকর নয়, বরং জীবনের গুণমানেও প্রভাব ফেলতে পারে। কোমর ব্যথার কারণসমূহ বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আমাদের শরীরের বিভিন্ন দিকের সংকেত দেয়। এখানে কিছু মূল কারণ তুলে ধরা হলো যা কোমর ব্যথার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন:


কোমর ব্যথা


ভুল পোজিশন বা স্থূল বসা

দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা বা ভুল পোজিশনে বসে কাজ করা কোমরের ব্যথার অন্যতম কারণ। সোজা না বসলে কোমরের ওপর চাপ বাড়ে, যা পেশী এবং ডিস্কে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় বসে থাকার অভ্যাস কোমর ব্যথার একটি প্রধান কারণ। যদি আপনার শরীরের পজিশন সঠিক না থাকে, তাহলে কোমরের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বেশি সময় বসে থাকা, কুঁজো হয়ে বসা, বা উঁচুতে বসে থাকার ফলে কোমরের মাংসপেশী এবং শিরাগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি হয়।


অস্বাস্থ্যকর আসন ব্যবস্থা এই সমস্যাকে আরও তীব্র করে তোলে। যদি আপনার চেয়ার বা আসন আরামদায়ক না হয় বা কোমরের যথাযথ সমর্থন না দেয়, তবে কোমরের মাংসপেশী ও স্নায়ুতে অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে। দীর্ঘ সময় এক জায়গায় বসে থাকার ফলে কোমরের পেশীগুলো অকেজো হয়ে পড়ে এবং সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, যা কোমর ব্যথার সৃষ্টি করে। এছাড়া, পেশীগুলোর শক্তি ও নমনীয়তা কমে গেলে কোমরের স্বাভাবিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে, ফলে কোমর ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে সঠিক বসার অভ্যাস ও উপযুক্ত আসন ব্যবস্থার প্রতি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন, যাতে কোমরের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।



শারীরিক পরিশ্রমের অভাব

নিয়মিত ব্যায়ামের অভাব কোমরের পেশীগুলিকে দুর্বল করে দেয়। দুর্বল পেশী কোমরের সমর্থন দিতে পারে না, ফলে কোমরে ব্যথা হতে পারে। শারীরিক পরিশ্রমের অভাব কোমর ব্যথার একটি প্রধান কারণ হতে পারে, এবং এর ফলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রথমত, নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপের অভাবে কোমরের পেশীগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। পেশীগুলো শক্তিশালী এবং নমনীয় রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা প্রয়োজন। দুর্বল পেশীগুলো কোমরের সঠিক সমর্থন বজায় রাখতে সক্ষম হয় না, যা কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে। শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে কোমরের পেশীগুলো অমসৃণ হয়ে যায়, ফলে পেশীগুলোর মধ্যে অস্বস্তি ও ব্যথা সৃষ্টি হয়। একসঙ্গে বসে থাকার বা কম চলাফেরা করার কারণে পেশীগুলোর মসৃণতা কমে যায়, যা কোমর ব্যথার অনুভূতি বাড়ায়। অস্তিরতা এবং অঙ্গসংযোগের দুর্বলতা একটি আরেকটি সমস্যা।


শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে শরীরের অঙ্গসংযোগগুলো (জয়েন্ট) দুর্বল হয়ে পড়ে। কোমরের অঙ্গসংযোগে অস্থিরতা দেখা দিলে, এর ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে, যা কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে। শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে মেটাবলিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, যা পেশী ও হাড়ের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। এই মেটাবলিক সমস্যাগুলি কোমরের ব্যথা বাড়াতে পারে। অপরদিকে, শরীরের অতিরিক্ত মেদ জমা হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। শারীরিক পরিশ্রম না করার কারণে কোমরের চারপাশে অতিরিক্ত মেদ জমে যায়, যা কোমরের পেশী ও অঙ্গসংযোগে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, এবং এর ফলে কোমর ব্যথা হতে পারে। এই সমস্যা গুলোর প্রতিকার করার জন্য নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, সঠিক জীবনযাপন, এবং সুস্থ অভ্যাস গ্রহণ করা প্রয়োজন, যা কোমরের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করবে।


kratomKratom জয়েন্ট গার্ড একটি কার্যকরী খাদ্য পণ্য, বিশেষভাবে হাড় জয়েন্ট জন্য প্রাকৃতিক যত্ন প্রণয়ন. Visit Now


অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা

ওজন বাড়লে কোমরের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এটি কোমরের ডিস্ক এবং পেশীর ওপর অতিরিক্ত স্ট্রেন সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে ব্যথা শুরু হয়। অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা কোমর ব্যথার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে কাজ করতে পারে। এর ফলে বিভিন্ন উপায়ে কোমরের সমস্যা সৃষ্টি হয়। প্রথমত, অতিরিক্ত ওজন কোমরের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপ কোমরের পেশী, হাড় এবং অঙ্গসংযোগগুলোর ওপর পড়ে, যা কোমরের ব্যথার কারণ হতে পারে। বিশেষ করে, কোমরের নিচের অংশে অতিরিক্ত মেদের জমা হলে চাপ আরও বৃদ্ধি পায়, যা কোমরের অস্বস্তি ও ব্যথা বাড়াতে পারে।


স্থূলতা শরীরের বিভিন্ন অংশে অতিরিক্ত মেদ জমিয়ে দেয়, বিশেষ করে কোমরের চারপাশে। এই অতিরিক্ত মেদ কোমরের পেশী এবং অঙ্গসংযোগে চাপ সৃষ্টি করে, যা কোমরের ব্যথা বাড়াতে পারে। অতিরিক্ত ওজন শরীরের অঙ্গসংযোগগুলোর (জয়েন্ট) অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে। কোমরের জয়েন্টগুলোতে অস্বাভাবিক চাপ পড়লে অস্বস্তি ও ব্যথা অনুভূত হতে পারে। অতিরিক্ত ওজন পেশীগুলোর দুর্বলতা সৃষ্টি করে। কোমরের পেশীগুলো যদি যথেষ্ট শক্তিশালী না হয়, তাহলে কোমরের সঠিক সমর্থন বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে, ফলে কোমর ব্যথা হতে পারে। স্থূলতা প্রায়ই শারীরিক কার্যকলাপের অভাবের সাথে সম্পর্কিত। কম চলাফেরা এবং অল্প শারীরিক পরিশ্রম কোমরের পেশীগুলোর নমনীয়তা কমিয়ে দেয়, যা কোমরের ব্যথার কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত ওজন মেটাবলিক সমস্যা তৈরি করতে পারে, যা কোমরের পেশী ও হাড়ের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। এই মেটাবলিক সমস্যাগুলি কোমরের ব্যথা বাড়াতে পারে। এই সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করার জন্য নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অপরিহার্য।


পেশী টান বা স্ট্রেইন

অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ভারী বস্তু তোলার সময় কোমরের পেশী টান পড়তে পারে। এই ধরনের টান পেশীর ক্ষতি করে এবং কোমরে ব্যথার কারণ হতে পারে। পেশী টান বা স্ট্রেইন কোমর ব্যথার একটি সাধারণ কারণ, যা বিভিন্ন উপায়ে কোমরের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। মাসল স্ট্রেইন তখন ঘটে যখন কোমরের পেশীগুলো অতিরিক্ত চাপ বা অস্বাভাবিকভাবে টানা হয়। এই অতিরিক্ত টান পেশীগুলোর ফাইবারে ক্ষতি করতে পারে, যা কোমরের ব্যথার কারণ হতে পারে। পেশী টান হলে কোমরের পেশীগুলো ফুলে যেতে পারে। ফুলে যাওয়া পেশীগুলো কোমরের চারপাশে চাপ সৃষ্টি করে, যা ব্যথার অনুভূতি আরও তীব্র করে দেয়।


পেশী টানের ফলে কোমরের পেশীগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল পেশীগুলো কোমরের সঠিক সমর্থন প্রদান করতে না পারায় কোমরের ব্যথা হতে পারে। পেশী টান পেশীর স্পাজম (মাসল সঙ্কুচন) সৃষ্টি করতে পারে। এই স্পাজম কোমরের ব্যথার অনুভূতি তীব্র করতে পারে এবং চলাফেরার সময় অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। অস্বাস্থ্যকর শরীরের অবস্থান, যেমন ভুলভাবে বসা বা দাঁড়িয়ে থাকা, পেশী টানের অন্যতম কারণ। এই ভুল অবস্থান কোমরের পেশীগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা কোমরের ব্যথার কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমও পেশী টানের একটি সাধারণ কারণ। হঠাৎ করে ভারী ওজন তোলার বা কঠিন শারীরিক কাজ করার ফলে কোমরের পেশীগুলো টানাপোড়েনের শিকার হতে পারে, যা কোমরের ব্যথার সৃষ্টি করে। এই সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করার জন্য সঠিক বিশ্রাম, স্ট্রেচিং এবং হালকা ব্যায়াম করা জরুরি। যদি ব্যথা তীব্র হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।



ডিস্ক স্লিপ বা হার্নিয়া

কোমরের ডিস্ক যদি সরে যায় বা ফেটে যায়, তবে এটি স্নায়ুতে চাপ দেয়, যার ফলে তীব্র ব্যথা হয়। এই ধরনের সমস্যা প্রায়শই স্থায়ী ব্যথার কারণ হতে পারে। ডিস্ক স্লিপ বা হার্নিয়া কোমরের ব্যথার একটি গুরুতর কারণ হতে পারে। এখানে কীভাবে ডিস্ক স্লিপ কোমরের ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:


ডিস্কের অবস্থান পরিবর্তন: কোমরের হাড়ের মধ্যে যে ডিস্কগুলো রয়েছে, তারা মূলত 'প্যাড' বা 'বাফার' হিসেবে কাজ করে। ডিস্ক স্লিপ হলে, ডিস্কের পৃষ্ঠ ফেটে যায় এবং তার ভেতরের স্তর বেরিয়ে আসে। এই বেরিয়ে আসা অংশটি আশপাশের স্নায়ু এবং কাঠামোর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা কোমরের ব্যথার কারণ হতে পারে।

স্নায়ু চাপ: ডিস্ক স্লিপ বা হার্নিয়া ঘটলে, বেরিয়ে আসা ডিস্কের অংশ স্নায়ু রুটে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এই চাপ স্নায়ুতে ব্যথা, ঝিনঝিনে ভাব, অথবা অবশ অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে, যা কোমরের ব্যথার সাথে যুক্ত হয়ে থাকতে পারে।

পেশীর অস্বস্তি: ডিস্ক স্লিপ পেশীগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা কোমরের পেশীগুলোর অস্বস্তি ও ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে। কোমরের পেশীগুলো দুর্বল হয়ে পড়তে পারে, যার ফলে ব্যথার অনুভূতি বাড়তে পারে।

মাসল স্পাজম: ডিস্ক স্লিপের ফলে কোমরের পেশীগুলো টানাপোড়েনের শিকার হতে পারে এবং স্পাজম (মাসল সঙ্কুচন) সৃষ্টি করতে পারে। এই পেশীর স্পাজম কোমরের ব্যথার অনুভূতি তীব্র করে দেয়।

অস্বাস্থ্যকর শরীরের অবস্থান: ডিস্ক স্লিপ বা হার্নিয়ার ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে অস্বাস্থ্যকর অবস্থান তৈরি হতে পারে, যেমন সোজা না বসা বা দাঁড়িয়ে থাকা। এই ভুল অবস্থান কোমরের ব্যথার অনুভূতি বাড়াতে পারে।

বাহ্যিক চাপ: হঠাৎ করে ভারী ওজন তোলার বা অস্বাভাবিকভাবে কাজ করার ফলে ডিস্কে অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে, যা ডিস্ক স্লিপের কারণ হতে পারে এবং কোমরের ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। ডিস্ক স্লিপ বা হার্নিয়া থেকে মুক্তি পেতে সঠিক চিকিৎসা এবং প্রতিকার গ্রহণ করা জরুরি। একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, যাতে কোমরের ব্যথা কমিয়ে আনতে সহায়তা হয়।


অযথা স্ট্রেন বা টেনশন

মানসিক চাপ এবং উদ্বেগও কোমরের ব্যথার জন্য দায়ী হতে পারে। মানসিক চাপ শারীরিক চাপ বৃদ্ধি করতে পারে, যা কোমরের পেশীতে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। অযথা স্ট্রেন বা টেনশন কোমরের ব্যথার একটি সাধারণ কারণ হতে পারে। এই স্ট্রেনের ফলে কোমরের পেশীগুলোর ওপর বিভিন্ন প্রভাব পড়তে পারে, যা ব্যথার সৃষ্টি করে। এখানে কীভাবে অযথা স্ট্রেন কোমরের ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:


পেশী টান: শরীরের অতিরিক্ত চাপ বা অস্বাভাবিক শারীরিক কার্যকলাপের ফলে কোমরের পেশীগুলো টানাপোড়েনের শিকার হতে পারে। এই পেশী টান কোমরের পেশীগুলোর ফাইবারে ক্ষতি করে এবং ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। টানার ফলে পেশীগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং কোমরের ব্যথা বাড়তে থাকে।

পেশীর ক্লান্তি: দীর্ঘ সময় ধরে একটানা চাপ বা টেনশনের মধ্যে থাকার ফলে কোমরের পেশীগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়ে। পেশীর ক্লান্তি কোমরের স্থিতিশীলতা ও সমর্থন কমিয়ে দেয়, যার ফলে কোমরের ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

পেশী ফুলে যাওয়া: অতিরিক্ত টেনশন কোমরের পেশীগুলোর মধ্যে ফুলে যাওয়ার সৃষ্টি করতে পারে। ফুলে যাওয়া পেশীগুলো কোমরের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং ব্যথার অনুভূতি বৃদ্ধি করে। ফুলে যাওয়া পেশীগুলোর জন্য কোমরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হতে পারে।

মাসল স্পাজম: স্ট্রেন বা টেনশন পেশীর স্পাজম বা সঙ্কুচন সৃষ্টি করতে পারে। এই মাসল স্পাজম কোমরের ব্যথাকে তীব্র করে দেয় এবং চলাফেরার সময় অস্বস্তি সৃষ্টি করে। স্পাজমের ফলে পেশীগুলো অস্বাভাবিকভাবে সংকুচিত হয়ে যায়, যা ব্যথার অনুভূতি আরও বাড়িয়ে দেয়।

অস্বাস্থ্যকর শরীরের অবস্থান: স্ট্রেন বা টেনশনের কারণে শরীরের অবস্থান ভুল হয়ে যেতে পারে, যেমন কুঁজো হয়ে বসা বা সোজা না দাঁড়িয়ে থাকা। এই ভুল অবস্থান কোমরের পেশীগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং ব্যথা বাড়াতে পারে। সঠিক শরীরের অবস্থান বজায় না রাখলে কোমরের সমস্যা বৃদ্ধি পায়।

স্ট্রেনের পরিণতি: হঠাৎ করে বেশি ভারী ওজন তোলার বা অস্বাভাবিকভাবে কাজ করার ফলে কোমরের পেশীগুলোর ওপর অতিরিক্ত স্ট্রেন সৃষ্টি হতে পারে। এটি কোমরের পেশীগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং কোমরের ব্যথার একটি সাধারণ কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অযথা স্ট্রেন বা টেনশন থেকে মুক্তি পেতে সঠিক বিশ্রাম, স্ট্রেচিং, এবং পেশীর সঠিক যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। যদি কোমরের ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র হয়, তবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।


age back pain


বয়সজনিত পরিবর্তন

বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটে, যা কোমরের ব্যথার কারণ হতে পারে। এই পরিবর্তনগুলি কোমরের পেশী, জয়েন্ট এবং হাড়ের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। নিচে বয়সজনিত পরিবর্তনের মাধ্যমে কোমরের ব্যথার কারণগুলি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:


১. ডিস্কের আংশিক ক্ষয়: বয়স বাড়ার সাথে সাথে কোমরের হাড়ের মধ্যে থাকা ডিস্কগুলো পৃষ্ঠহীন হয়ে পড়ে। এই ডিস্কগুলো মূলত একটি 'বাফার' হিসেবে কাজ করে, যা হাড়ের মধ্যে চাপকে শোষণ করে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ডিস্কগুলোর নমনীয়তা কমে যায় এবং তারা পাতলা হয়ে পড়ে, যা কোমরের ব্যথার কারণ হতে পারে। ডিস্কের ক্ষয় বা ডিজেনারেশন কোমরের সমর্থন ও স্থিতিশীলতা কমিয়ে দেয়, যা ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে।

২. জয়েন্টের অস্টিওআর্থ্রাইটিস: অস্টিওআর্থ্রাইটিস বয়সজনিত একটি অবস্থার নাম, যা কোমরের জয়েন্টে দেখা দিতে পারে। এই অবস্থায় জয়েন্টের পৃষ্ঠে ক্ষতি হয় এবং জয়েন্টের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। জয়েন্টে ব্যথা, শক্তি কমে যাওয়া এবং গতি সীমিত হয়ে যেতে পারে, যা কোমরের ব্যথার কারণ হতে পারে।

৩. পেশী শক্তির হ্রাস: বয়স বাড়ার সাথে সাথে কোমরের পেশীগুলোর শক্তি ও নমনীয়তা কমে যায়। দুর্বল পেশীগুলো কোমরের স্বাভাবিক সমর্থন প্রদান করতে সক্ষম হয় না, যা কোমরের ব্যথার অনুভূতি বাড়াতে পারে। পেশীর দুর্বলতা কোমরের স্থিতিশীলতা কমিয়ে দেয় এবং ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

৪. হাড়ের ঘনত্বের হ্রাস: অস্টিওপোরোসিস নামক অবস্থার সৃষ্টি হয় যখন বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। এই অবস্থায় হাড়ের দুর্বলতা ও ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি পায়, যা কোমরের ব্যথার কারণ হতে পারে। দুর্বল হাড় কোমরের স্থিতিশীলতা হ্রাস করে এবং ব্যথা বাড়াতে পারে।

৫. লিগামেন্টের নমনীয়তা কমে যাওয়া: বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে লিগামেন্টগুলোর নমনীয়তা কমে যায়। লিগামেন্ট কোমরের হাড় ও জয়েন্টগুলিকে স্থিতিশীল রাখে, কিন্তু বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এই লিগামেন্টগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। লিগামেন্টের দুর্বলতা কোমরের ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে এবং এতে ব্যথা ও অস্বস্তি বাড়তে পারে।

৬. সামগ্রিক শারীরিক কার্যকলাপের হ্রাস: বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শারীরিক কার্যকলাপ কমে যেতে পারে। কম চলাফেরা এবং ব্যায়াম না করার কারণে কোমরের পেশীগুলোর শক্তি ও নমনীয়তা কমে যায়, যা কোমরের ব্যথার অনুভূতি বৃদ্ধি করতে পারে। শারীরিক কার্যকলাপের অভাব কোমরের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

৭. শরীরের চর্বি জমা: বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমা হতে পারে। কোমরের চারপাশে অতিরিক্ত মেদ জমা হলে এটি কোমরের পেশী ও জয়েন্টগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যা কোমরের ব্যথার কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত মেদ কোমরের স্থিতিশীলতা কমিয়ে দেয় এবং ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।


বয়সজনিত পরিবর্তনের কারণে কোমরের ব্যথা কমানোর জন্য নিয়মিত শরীরচর্চা, সঠিক পুষ্টি এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। পেশী ও জয়েন্টের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে স্ট্রেচিং ও ব্যায়াম করা কোমরের ব্যথার ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে।


কোমরের ব্যথা কমানোর উপায়

কোমরের ব্যথা এমন একটি সমস্যা যা দৈনন্দিন জীবনে অনেকেরই ভোগান্তির কারণ হতে পারে। তবে সঠিক অভ্যাস এবং কিছু কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করে এই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নিচে কিছু উপায় দেওয়া হলো যেগুলো মেনে চললে আপনি কোমরের ব্যথা কমাতে পারবেন।


১. সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা:

দৈনন্দিন কাজের সময় সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বসা, দাঁড়ানো, কিংবা কাজ করার সময় কোমর এবং মেরুদণ্ড সোজা রাখুন।

বসা: কম্পিউটারে কাজ করার সময় বা অফিসে বসার সময় চেয়ারের পেছনের অংশে পুরো পিঠ টিকিয়ে বসুন। পায়ের পাতাগুলো মেঝেতে সমানভাবে রাখুন, যাতে কোমরের ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।

দাঁড়ানো: দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়াতে হলে ওজনকে দুই পায়ের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে নিন। প্রয়োজনে এক পা উঁচু করে রাখতে পারেন, এতে কোমরের ওপর চাপ কমে।

ওজন বহন: ভারী কিছু তুলতে হলে কোমর বাঁকানো থেকে বিরত থাকুন। বরং হাঁটু মুড়ে বসে ওজন তুলুন এবং তা শরীরের কাছাকাছি রাখুন। এটি কোমরের পেশীগুলোর ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করে।


২. নিয়মিত মুভমেন্ট:

দীর্ঘ সময় এক জায়গায় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে কোমরের পেশীগুলো শক্ত হয়ে যেতে পারে, যা ব্যথা বাড়াতে পারে। তাই নিয়মিত বিরতি নিয়ে হাঁটাচলা করা উচিত।

চলাফেরা: প্রতি ৩০-৪৫ মিনিট পর পর উঠে কিছুক্ষণ হাঁটুন। এতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং কোমরের পেশীগুলোর ওপর চাপ কমে।

বাড়িতে কাজ করা: ঘরের কাজ করার সময় এক জায়গায় স্থির না থেকে কোমরের পেশীগুলোর নড়াচড়া করিয়ে রাখুন। যেমন রান্না বা বাসন মাজার সময় এক পা থেকে আরেক পায়ে ওজন স্থানান্তর করুন।


৩. সঠিক ঘুমের অবস্থান:

ঘুমানোর সময় সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা কোমরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

পাশ ফিরে ঘুমানো: যদি কোমরের ব্যথা থাকে, তবে পাশ ফিরে পা ভাঁজ করে ঘুমান এবং হাঁটুর মাঝখানে একটি বালিশ রাখুন। এতে মেরুদণ্ড সোজা থাকে।

পিঠের ওপর ঘুমানো: পিঠের ওপর ঘুমানোর সময় পায়ের নিচে একটি বালিশ রাখুন। এতে কোমরের প্রাকৃতিক বাঁক রক্ষা হয় এবং ব্যথা কমে।


৪. নিয়মিত হালকা ব্যায়াম:

দৈনন্দিন জীবনে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করলে কোমরের পেশীগুলো মজবুত ও নমনীয় থাকে, যা ব্যথা কমাতে সহায়ক।

স্ট্রেচিং: প্রতিদিন সকালে বা রাতে কোমরের পেশীগুলো স্ট্রেচ করুন। এটি পেশীগুলোর চাপ কমায় এবং নমনীয়তা বৃদ্ধি করে।

মার্চিং এক্সারসাইজ: কোমরের পেশীগুলোর শক্তি বাড়াতে হালকা ব্যায়াম যেমন মার্চিং এক্সারসাইজ করতে পারেন, এতে কোমরের ব্যথা কমে।


৫. ওজন নিয়ন্ত্রণ:

অতিরিক্ত ওজন কোমরের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা ব্যথার কারণ হতে পারে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ করুন।


৬. সঠিক জুতো ব্যবহার:

দৈনন্দিন কাজে সঠিক জুতো পরা কোমরের ব্যথা কমাতে সহায়ক হতে পারে। সমর্থনযুক্ত ও আরামদায়ক জুতো পরার চেষ্টা করুন, বিশেষ করে যারা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে বা হাঁটাচলা করেন।


৭. শারীরিক কার্যকলাপের সময় সতর্ক থাকা:

দৈনন্দিন কাজ যেমন ভারী বস্তু তোলা, মেঝে পরিষ্কার করা ইত্যাদি করার সময় সতর্ক থাকুন এবং সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করুন। এতে কোমরের ব্যথা কমে এবং আঘাতের ঝুঁকি কমে।


back pain exercise


কোমরে ব্যথার ব্যায়াম

কোমরের ব্যথা কমানোর জন্য কিছু সহজ ব্যায়াম রয়েছে যা বাড়িতে করা যায়। এই ব্যায়ামগুলো নিয়মিতভাবে করলে কোমরের পেশীগুলো মজবুত ও নমনীয় হয়, যা ব্যথা কমাতে সহায়ক। নিচে কিছু ব্যায়ামের বিবরণ দেওয়া হলো:


১. ক্যাট-কাউ স্ট্রেচ (Cat-Cow Stretch): এই ব্যায়ামটি কোমরের নমনীয়তা বাড়াতে এবং মেরুদণ্ডের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক।


কীভাবে করবেন:

  • হাত ও হাঁটু মাটিতে রেখে চারপাশে সমানভাবে ভারসাম্য বজায় রাখুন।
  • প্রথমে শ্বাস নিন এবং পিঠকে বাঁকা করুন (Cat পজিশন)। মাথা নিচে নামান এবং পেটকে ভেতরে টানুন।
  • এরপর শ্বাস ছাড়ুন এবং পিঠকে উল্টো বাঁকান (Cow পজিশন)। মাথা এবং কোমর উল্টো দিকে উঁচু করুন।
  • এই দুটি পজিশনের মধ্যে ধীরে ধীরে পরিবর্তন করুন। ১০-১৫ বার পুনরাবৃত্তি করুন।


২. ব্রিজ পোজ (Bridge Pose): এই ব্যায়ামটি কোমরের পেশীগুলোকে শক্তিশালী করতে সহায়ক।


কীভাবে করবেন:

  • পিঠের ওপর শুয়ে পা মাটিতে রাখুন এবং হাঁটু বাঁকান।
  • হাত দুটি পাশে রাখুন এবং শ্বাস নিতে নিতে কোমরকে উঁচু করুন।
  • কাঁধ ও পা মাটিতে রেখে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখুন।
  • কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখুন, তারপর ধীরে ধীরে কোমর নামান। ১০-১২ বার পুনরাবৃত্তি করুন।


৩. নী-কেস্ট টু চেস্ট (Knee-to-Chest): এই ব্যায়ামটি কোমরের পেশীগুলোর নমনীয়তা বাড়ায় এবং পিঠের পেশীগুলোর চাপ কমায়।


কীভাবে করবেন:

  • পিঠের ওপর শুয়ে একটি পা ভাঁজ করে হাঁটু বুকের কাছে আনুন।
  • দুই হাত দিয়ে হাঁটু ধরে রাখুন এবং কোমরের পেশীগুলো প্রসারিত করুন।
  • ১৫-৩০ সেকেন্ড ধরে রাখুন, তারপর ধীরে ধীরে পা নামিয়ে ফেলুন। উভয় পায়ের জন্য ৩-৪ বার পুনরাবৃত্তি করুন।


৪. পেলভিক টিল্ট (Pelvic Tilt): এই ব্যায়ামটি কোমরের পেশীগুলোর শক্তি বাড়ায় এবং কোমরের ব্যথা কমাতে সহায়ক।


কীভাবে করবেন:

  • পিঠের ওপর শুয়ে পা মাটিতে রাখুন এবং হাঁটু বাঁকান।
  • কোমরকে মাটির দিকে ধাক্কা দিন এবং পেটকে ভেতরে টানুন।
  • কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখুন, তারপর শিথিল করুন। ১০-১৫ বার পুনরাবৃত্তি করুন।


৫. চাইল্ডস পোজ (Child’s Pose): এই ব্যায়ামটি কোমরের পেশীগুলো প্রসারিত করতে এবং ব্যথা কমাতে সহায়ক।


কীভাবে করবেন:

  • হাঁটু মুড়ে মাটিতে বসুন এবং শরীরকে সামনে নিয়ে যান।হাত দুটি সামনে প্রসারিত করুন এবং মাটিতে রাখুন।
  • কোমরের পেশীগুলো প্রসারিত করুন এবং ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। ৩-৪ বার পুনরাবৃত্তি করুন।


৬. সাইড লেগ লিফ্ট (Side Leg Lift): এই ব্যায়ামটি কোমরের এবং পাশের পেশীগুলোর শক্তি বাড়ায়।


কীভাবে করবেন:

  • একপাশে শুয়ে পা সোজা করুন।উপরের পা ধীরে ধীরে উঁচু করুন এবং কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখুন।
  • ধীরে ধীরে পা নামান এবং পুনরায় লিফট করুন। উভয় পায়ের জন্য ১০-১২ বার পুনরাবৃত্তি করুন।


৭. কবরা স্ট্রেচ (Cobra Stretch): এই ব্যায়ামটি কোমরের পেশীগুলোর নমনীয়তা বাড়াতে সাহায্য করে।


কীভাবে করবেন:

  • পেটের ওপর শুয়ে হাত দুটি মাটিতে রাখুন।
  • হাতের ওপর ভর দিয়ে ধীরে ধীরে মাথা ও বুক উঠান।
  • কোমরের পেশীগুলো প্রসারিত করুন এবং ১০-১৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন। ৫-৭ বার পুনরাবৃত্তি করুন।


এই ব্যায়ামগুলো নিয়মিতভাবে করলে কোমরের পেশীগুলো মজবুত হবে এবং ব্যথা কমবে। তবে যদি ব্যথা তীব্র হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।


কোমর ব্যথা কিসের লক্ষণ

কোমর ব্যথা বিভিন্ন সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এটি কখনও কখনও তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে এটি শরীরের অন্য কোনো সমস্যার কারণে হতে পারে। নিচে কোমর ব্যথার সম্ভাব্য কিছু লক্ষণ এবং কারণ উল্লেখ করা হলো:


১. মাংসপেশির আঘাত বা টান

কোমরের পেশীতে আঘাত লাগা বা টান পড়লে ব্যথা হতে পারে। এটি ভারী কিছু তোলার সময় বা শরীরের অস্বাভাবিকভাবে মুভমেন্ট করার সময় হতে পারে।


২. ডিস্ক সমস্যাসমূহ

মেরুদণ্ডের ডিস্কের ক্ষয় বা ক্ষতি হলে কোমরে ব্যথা হতে পারে।


উদাহরণ:

হার্নিয়েটেড ডিস্ক: যখন ডিস্কের একটি অংশ বের হয়ে যায় এবং নার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।

ডিজেনারেটিভ ডিস্ক ডিজিজ: বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ডিস্কের স্থিতিস্থাপকতা কমে যাওয়ার কারণে কোমরে ব্যথা হতে পারে।


৩. সায়াটিকা (Sciatica)

সায়াটিকা হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে মেরুদণ্ড থেকে পায়ের দিকে যাওয়া সায়াটিক নার্ভের ওপর চাপ পড়ে। এর ফলে কোমর থেকে পায়ের দিকে ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে।


৪. স্পাইনাল স্টেনোসিস (Spinal Stenosis)

মেরুদণ্ডের ভেতরের স্থান সংকীর্ণ হয়ে গেলে নার্ভের ওপর চাপ পড়ে এবং কোমর ব্যথা হতে পারে। এটি সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।


৫. অস্টিওআর্থ্রাইটিস (Osteoarthritis)

এটি একটি সাধারণ আর্থ্রাইটিসের প্রকার যেখানে মেরুদণ্ডের জয়েন্টগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে কোমরে ব্যথা সৃষ্টি করে।


৬. কিডনি সমস্যা

কিডনিতে পাথর বা সংক্রমণ থাকলে কোমরে ব্যথা হতে পারে। এটি সাধারণত কোমরের একপাশে তীব্র ব্যথা হিসেবে অনুভূত হয়।


৭. অস্টিওপরোসিস (Osteoporosis)

এই অবস্থায় হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়, ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যায় এবং অল্প চাপেই ফ্র্যাকচার হতে পারে, যা কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে।


৮. ইনফেকশন বা টিউমার

মেরুদণ্ডে কোনো ইনফেকশন বা টিউমার থাকলে কোমর ব্যথা হতে পারে। এই ধরনের ব্যথা সাধারণত ক্রমাগত এবং তীব্র হয়।


৯. সার্ভিকাল বা লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস (Cervical or Lumbar Spondylosis)

মেরুদণ্ডের সার্ভিকাল বা লাম্বার অংশে ক্ষয়প্রাপ্তি বা আর্থ্রাইটিসের কারণে কোমরে ব্যথা হতে পারে।


১০. গর্ভাবস্থা

গর্ভাবস্থায় মহিলাদের কোমরে ব্যথা হওয়া সাধারণ। এর কারণ হলো শরীরের ওজন বৃদ্ধি, হরমোনের পরিবর্তন, এবং মেরুদণ্ডের ওপর চাপ বৃদ্ধি।


back pain medicine

কোমর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা

কোমর ব্যথা কমানোর জন্য কিছু কার্যকরী ঘরোয়া চিকিৎসা রয়েছে। এ ধরনের চিকিৎসাগুলো অনেক ক্ষেত্রে আরামদায়ক হতে পারে এবং ব্যথা কমাতে সহায়ক হতে পারে। নিচে কিছু ঘরোয়া চিকিৎসার উপায় দেওয়া হলো:


১. গরম বা ঠান্ডা সেঁক

  • গরম সেঁক: একটি হট ওয়াটার ব্যাগ বা গরম তোয়ালে কোমরের ওপর প্রয়োগ করলে পেশীর টান কমে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  • ঠান্ডা সেঁক: ব্যথা শুরু হওয়ার প্রথম দিকে ঠান্ডা সেঁক (বরফ প্যাক) ব্যবহার করলে ব্যথা এবং ফোলাভাব কমে।


২. তেল মালিশ

কোমরে তেল মালিশ করা একটি পুরনো এবং জনপ্রিয় ঘরোয়া চিকিৎসা। গরম সরিষার তেল, নারকেল তেল, বা ল্যাভেন্ডার তেল দিয়ে কোমরে হালকা মালিশ করলে পেশীর ব্যথা কমে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।


৩. স্ট্রেচিং ব্যায়াম

হালকা স্ট্রেচিং ব্যায়াম কোমরের পেশী এবং লিগামেন্টকে শিথিল করতে সাহায্য করে। এই ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করলে কোমরের নমনীয়তা বৃদ্ধি পায় এবং ব্যথা কমে।


৪. সঠিক বিশ্রাম

সঠিকভাবে বিশ্রাম নেয়া কোমরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। শক্ত বিছানায় বা ফ্ল্যাট সারফেসে শুয়ে কোমরের পেশীগুলোকে আরাম দেওয়া যেতে পারে।


৫. আদা ও হলুদ

আদা ও হলুদ প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান হিসেবে কাজ করে। আপনি আদার চা পান করতে পারেন বা হলুদ দুধ (গোল্ডেন মিল্ক) পান করতে পারেন, যা কোমরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।


৬. ইপসম সল্ট বাথ

গরম পানিতে ইপসম সল্ট মিশিয়ে স্নান করলে কোমরের পেশীগুলো আরাম পায় এবং ব্যথা কমে।


৭. ওজন নিয়ন্ত্রণ

অতিরিক্ত ওজন কোমরের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা কোমর ব্যথা কমাতে সহায়ক হতে পারে।


৮. দুধ ও মধু

দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। মধু মিশিয়ে দুধ পান করলে পেশীর ব্যথা কমে।


৯. যোগব্যায়াম

নিয়মিত যোগব্যায়াম করলে কোমরের পেশী ও মেরুদণ্ডের নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়। এটি কোমরের ব্যথা দূরীকরণে সহায়ক হতে পারে।


১০. আলসিয়া পাতা ও রসুনের মিশ্রণ

আলসিয়া পাতা এবং রসুনের মিশ্রণ তৈরি করে কোমরে প্রয়োগ করলে ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এই ঘরোয়া চিকিৎসাগুলো প্রাথমিকভাবে কোমর ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র হয়, তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।


কোমর ব্যথার ওষুধ

কোমর ব্যথার চিকিৎসায় সাধারণত ব্যথানাশক ওষুধ, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ, পেশী শিথিলকারী ওষুধ, এবং অন্যান্য চিকিৎসা উপকরণ ব্যবহার করা হয়। নিচে কিছু ওষুধের তালিকা দেওয়া হলো যা কোমর ব্যথার চিকিৎসায় সহায়ক হতে পারে:


১. ব্যথানাশক ওষুধ প্যারাসিটামল (Paracetamol): হালকা থেকে মাঝারি কোমর ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল একটি সাধারণ ওষুধ। এটি ব্যথা কমাতে সহায়ক।

২. অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ ইবুপ্রোফেন (Ibuprofen): এটি একটি অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ যা ব্যথা এবং ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে।

  • নাপ্রোক্সেন (Naproxen): কোমর ব্যথা এবং প্রদাহ কমানোর জন্য এটি কার্যকরী।

৩. পেশী শিথিলকারী ওষুধ মায়োসিল (Myosil): পেশী শক্ত হওয়ার কারণে যদি কোমর ব্যথা হয়, তবে মায়োসিল পেশীগুলোকে শিথিল করে এবং ব্যথা কমায়।

  • ডিক্লোফেনাক (Diclofenac): এটি পেশী শিথিলকারী এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

৪. টপিকাল ক্রিম ও জেল ভোলটারেন জেল (Voltaren Gel): এটি ত্বকের ওপর প্রয়োগ করে পেশী ও কোমরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

  • ক্যাপসিকাম ক্রিম (Capsicum Cream): এই ক্রিমে ক্যাপসাইকিন থাকে, যা পেশী এবং জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

৫. স্টেরয়েড ইনজেকশন কোর্টিকোস্টেরয়েড ইনজেকশন: দীর্ঘস্থায়ী কোমর ব্যথার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে আর্থ্রাইটিসের কারণে হলে, কোর্টিকোস্টেরয়েড ইনজেকশন ব্যবহার করা যেতে পারে।

৬. প্রাকৃতিক ওষুধ হলুদ ও আদার নির্যাস: প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি হিসেবে কাজ করে, যা কোমরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

৭. নিউরোপ্যাথিক ওষুধ প্রেগাবালিন (Pregabalin): যদি কোমর ব্যথা স্নায়ুর সমস্যার কারণে হয়, তবে প্রেগাবালিন ব্যবহৃত হতে পারে।

৮. ফিজিওথেরাপি ও সহায়ক ডিভাইস ফিজিওথেরাপি: কোমর ব্যথার জন্য ফিজিওথেরাপি একটি কার্যকরী পদ্ধতি হতে পারে, যা পেশীর শক্তি এবং নমনীয়তা বৃদ্ধি করে।

  • ব্যাক ব্রেস বা সাপোর্ট বেল্ট: কোমরের সাপোর্ট দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়, যা ব্যথা কমাতে সহায়ক।


Visit Our Unani Medicine Shop: Unani Shop | Diabetes Medicine | Unani Skin Care & Hair Care | Health & Wellness | Weight Gainer Supplement | Sexual Wellness

Share Blog

    Related Blogs

  • blog image

    প্রাকৃতিক উপায়ে ওজন কমান

    Created : Tue May 06 2025

  • blog image

    মোটা হওয়ার প্রাকৃতিক ঔষধ

    Created : Sun Dec 22 2024

  • blog image

    খাদ্যাভ্যাস কাকে বলে? অতীত ও বর্তমানের খাদ্যাভাস

    Created : Tue Nov 19 2024

  • blog image

    হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায়

    Created : Sun Sep 29 2024

  • blog image

    হজম শক্তি বৃদ্ধির সিরাপ কেন খাবেন

    Created : Sun Sep 29 2024

  • blog image

    পাইলসের চিকিৎসায় কার্যকরী ইউনানী ঔষধ

    Created : Mon Sep 16 2024

  • blog image

    পাইলসের প্রাকৃতিক এবং হোলিস্টিক চিকিৎসা ও ঔষধ

    Created : Sun Sep 15 2024

  • blog image

    পাইলসের জন্য ইউনানী ঔষধ

    Created : Sun Sep 15 2024

Comments

Leave A Comment

renix logo

Renix Care is committed to provide high-quality Unani Medicine & Natural products at competitive prices backed by excellent customer service so you can trust us with your purchase decisions every time!

BlogAppointmentTracking Order

Quick Links

About UsContact UsReturn PolicyTerms & ConditionsPrivacy Policy

Popular Categories

ShopUnani MedicineHealth & WellnessBaby CareSkin & Hair CareSexual WellnessCombo Offer

Information